সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

হত্যাকাণ্ড কেন ঘটে? ঈশ্বর কেন এগুলো ঘটতে দেন?

হত্যাকাণ্ড কেন ঘটে? ঈশ্বর কেন এগুলো ঘটতে দেন?

 ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে নাতসিরা যিহুদিদের শেষ করার জন্য যে-গণহত্যা চালিয়েছিল সেটা হল একটা। সেই সময় থেকে অনেকেই শিরোনামে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু উত্তরটাই জানতে চায় এমন নয় বরং সান্ত্বনাও খোঁজে, কারণ তারা সেই গণহত্যায় অনেক প্রিয়জন হারিয়েছে এবং প্রচণ্ড কষ্ট সহ্য করেছে। এ ছাড়া অনেকে ভাবে যে, মানুষ কীভাবে এত নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে! এই সমস্ত কারণে তাদের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পরে।

ঈশ্বর ও নাতসিদের দ্বারা যিহুদি গণহত্যা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

ভুল ধারণা: ঈশ্বর কেন এই গণহত্যা ঘটতে দিয়েছেন তা জিজ্ঞেস করা উচিত নয়।

 সঠিক তথ্য: ঈশ্বরের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে এমন অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন যে, কেন ঈশ্বর দুষ্টতা থাকত দিয়েছেন? যেমন, ভাববাদী হবক্‌কূক ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কেন তুমি আমাকে দুষ্টতা দেখতে বাধ্য করছ? কেন তুমি অন্যায় সহ্য করছ? আমার সামনে ধ্বংস ও অত্যাচার হচ্ছে আর অনবরত ঝগড়া ও মারামারি চলছে।” (হবক্‌কূক ১:৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) ‘তোমার সাহস তো কম নয়!’ ঈশ্বর সেই ভাববাদীকে এমনটা বলে বকাঝকা করেননি বরং তার করা প্রশ্নগুলো তিনি বাইবেলে লিখিয়েছিলেন।

ভুল ধারণা: আমাদের দুঃখকষ্টের ব্যাপারে ঈশ্বরের কিছু যায়-আসে না।

 সঠিক তথ্য: ঈশ্বর দুষ্টতা ঘৃণা করেন আর দুষ্টতার কারণে মানুষকে কষ্ট পেতে দেখে তিনিও কষ্ট পান। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) যেমন, নোহের দিনে পুরো পৃথিবী দুষ্টতায় ভরে গিয়েছিল, আর তা দেখে ঈশ্বর ‘মনঃপীড়া পান।‘ (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহুদি হত্যাকাণ্ড দেখেও ঈশ্বর খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন।—মালাখি ৩:৬.

ভুল ধারণা: নাতসিদের দ্বারা গণহত্যার মাধ্যমে ঈশ্বর যিহুদিদের শাস্তি দিয়েছিলেন।

 সঠিক তথ্য: এটা ঠিক যে, প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরে রোমীয়দের দ্বারা জেরুসালেম নগর ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন। (মথি ২৩:৩৭–২৪:২) কিন্তু সেই সময় থেকে ঈশ্বর কোনো জাতিকে আর আলাদা করে দেখেন না, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট জাতিকে তিনি বিশেষ কোনো সুবিধাও দেন না অথবা শাস্তিও দেন না, কারণ তখন থেকে ঈশ্বরের কাছে “যিহূদী ও অযিহূদীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”—রোমীয় ১০:১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন.

ভুল ধারণা: একজন প্রেমময় ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যদি থাকতেনই, তা হলে তিনি অবশ্যই সেই গণহত্যা থামাতেন।

 সঠিক তথ্য: ঈশ্বর কখনোই আমাদেরকে মন্দ বিষয়ের দ্বারা পরীক্ষা করেন না আর তাই তিনি আমাদের দুঃখকষ্টের জন্য দায়ী নন। তবে কখনো কখনো তিনি আমাদের উপর দুঃখকষ্ট ঘটতে দেন; সেগুলো তিনি থামান না।—যাকোব ১:১৩; ৫:১১.

কেন ঈশ্বর নাতসিদের দ্বারা গণহত্যা থামাননি?

 এদন বাগানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলা হয়েছিল আর সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্ট হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। বাইবেল আমাদের স্পষ্টভাবে এও জানায় যে, শয়তান হল এই জগতের শাসক, ঈশ্বর নন। (লূক ৪:১, ২, ৬; যোহন ১২:৩১) তাই, আমরা যখন কষ্টভোগ করি তখন ঈশ্বর সেগুলো থামান না আর একই কারণে ঈশ্বর নাতসিদের দ্বারা গণহত্যাও থামাননি। ঈশ্বর কেন সেই গণহত্যা থামাননি তা আরেকটু ভালোভাবে বোঝার জন্য বাইবেল থেকে দুটো বিষয় লক্ষ করুন।

  1.  ১. ঈশ্বর মানুষকে বাছাই করার স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর তাদেরকে কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য তিনি তাদেরকে জোর করেননি। পরে তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিলেন আর কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ তা তারা নিজেরাই স্থির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আদম ও হবা ভুল বাছাই করেছিলেন। তাদের এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এবং সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত লোকদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও পুরো মানবজাতি ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:৬; রোমীয় ৫:১২) স্টেটমেন্ট অভ্‌ প্রিন্সিপলয়্র্‌স অভ্‌ কনজারভেটিভ জুডাইজম্‌ বই অনুযায়ী, “এই পৃথিবীতে যে-দুঃখকষ্ট রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই হল আমাদেরকে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার অপব্যবহারের ফল।“ কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে এই স্বাধীনতা কেড়ে নেননি বরং তাঁকে ছাড়া সফলভাবে জীবনযাপন করা যায় কি না সেটা চেষ্টা করে দেখতে তিনি মানবজাতিকে সময় দিয়েছিলেন।

  2.  ২. নাতসিদের দ্বারা গণহত্যার কারণে হওয়া সমস্ত ক্ষতি ঈশ্বর পূরণ করে দিতে পারেন আর অবশ্যই তিনি তা করবেন। ঈশ্বর মৃতদেরকে জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করেছেন। নিশ্চিতভাবে তাদের মধ্যে নাতসিদের দ্বারা গণহত্যায় যারা মারা গিয়েছে তারাও রয়েছে। এ ছাড়া, সেই গণহত্যার ভয়াবহ স্মৃতির কারণে যারা মানসিক কষ্ট পেয়েছে, ঈশ্বর তাদের কষ্টও পুরোপুরিভাবে দূর করে দেবেন। (যিশাইয় ৬৫:১৭; প্রেরিত ২৪:১৫) ঈশ্বর অবশ্যই তাঁর করা এই প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করবেন, কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন।—যোহন ৩:১৬.

 নাতসিদের দ্বারা গণহত্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস বজায় রাখতে পেরেছে এবং তাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে, কেন ঈশ্বর দুষ্টতা থামান না এবং আমাদের দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য তিনি কী করবেন।