সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৭

গান ১১১ আমাদের আনন্দের কারণ

পরমদেশের ভিতরে থাকুন, এটা ছেড়ে যাবেন না!

পরমদেশের ভিতরে থাকুন, এটা ছেড়ে যাবেন না!

“আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর।”যিশা. ৬৫:১৮.

আমরা কী শিখব?

পরমদেশের মতো এক পরিবেশে থাকার ফলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পাই এবং কীভাবে আমরা অন্যদের এর প্রতি আকর্ষিত করতে পারি, তা জানুন।

১. (ক) ঈশ্বরের তৈরি পরমদেশ কী? (খ) আমরা কী স্থির করেছি?

 বর্তমানে এই পৃথিবীতে এমন একটা পরমদেশ রয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক একসঙ্গে শান্তিতে থাকে। তাদের মাঝে প্রচুর ভালোবাসা রয়েছে এবং তারা সবসময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করে। তারা স্থির করে নিয়েছে যে, তারা সবসময় মিলেমিশে থাকবে এবং কখনো এই পরমদেশ ছেড়ে যাবে না। শুধু তা-ই নয়, তারা চায় যেন অনেক লোক এখানে আসে এবং তাদের মধ্যে যে-শান্তি রয়েছে, তা উপভোগ করে। কিন্তু আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, ‘এই পরমদেশ কী এবং সেটা কোথায়?’ এই পরমদেশ কোনো সত্যিকারের জায়গা নয়। এটা ঈশ্বরের তৈরি এমন এক পরিবেশ, যেখানে আমরা সবাই আমাদের ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করি এবং তাঁর সঙ্গে আর ভাই-বোনদের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করি।

২. ঈশ্বর আমাদের যে-পরমদেশ দিয়েছেন, সেটা কেন অনেক চমৎকার?

বর্তমানে, শয়তানের এই জগতে লোকেরা একে অন্যকে ঘৃণা করে আর কেউই সুরক্ষিত বোধ করে না। কিন্তু, এটা কতই-না চমৎকার বিষয় যে, যিহোবা আমাদের এত সুন্দর একটা পরমদেশ দিয়েছেন। (১ যোহন ৫:১৯; প্রকা. ১২:১২) তিনি জানেন, এই জগতের খারাপ প্রভাব আমাদের উপর পড়তে পারে। তাই তিনি এমন একটা পরমদেশ তৈরি করেছেন, যেখানে আমরা শান্তিতে থাকি, সুরক্ষিত থাকি এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা করি। বাইবেলে বলা আছে, এই পরমদেশ হল ‘আশ্রয় স্থান’ ও “জলসিক্ত উদ্যানের” মতো। (যিশা. ৪:৬; ৫৮:১১) যারা এখানে থাকে, তাদের উপর যিহোবার আশীর্বাদ রয়েছে। তাই, এই শেষকালের কঠিন সময়েও তারা আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে এবং সুরক্ষিত থাকে।—যিশা. ৫৪:১৪; ২ তীম. ৩:১.

৩. যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী কখন আর কোথায় পরিপূর্ণ হয়েছিল?

ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন, যারা এই পরমদেশে থাকবে, তারা কেমন অনুভব করবে এবং তাদের জীবন কেমন হবে। যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৭ সালে প্রথম বার পরিপূর্ণ হয়েছিল। যে-যিহুদিরা অনুতপ্ত হয়েছিল, তারা সেইসময়ে ব্যাবিলন থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল। জেরুসালেম নগর একেবারে তছনছ হয়ে পড়ে ছিল, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে তাঁর লোকেরা সেটাকে আবারও সুন্দর করে তুলেছিল। আবারও ঈশ্বরের মন্দিরে তাঁর উপাসনা শুরু হয়েছিল।—যিশা. ৫১:১১; সখ. ৮:৩.

৪. যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে আমাদের সময়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে?

যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী ১৯১৯ সাল থেকে দ্বিতীয় বার পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। ১৯১৯ সালে যিহোবার লোকদের মহতী বাবিল থেকে মুক্ত করা হয় এবং তারা পরমদেশের মতো এক পরিবেশে আবারও তাঁর উপাসনা করতে শুরু করে। তারা পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত প্রচার করতে শুরু করে এবং নতুন নতুন মণ্ডলী গঠন করে। ধীরে ধীরে অনেক লোক এই পরমদেশে আসে এবং নিজেদের মধ্যে ঈশ্বরের মতো গুণ গড়ে তোলে। একটা সময়ে যে-লোকেরা পশুদের মতো হিংস্র ছিল এবং অনেক জঘন্য কাজ করত, তারা ‘সেই নতুন ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো পরিধান করে, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (ইফি. ৪:২৪) যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীর মধ্যে কিছুটা এখন পরিপূর্ণ হচ্ছে আর কিছুটা নতুন জগতে পরিপূর্ণ হবে। তবে, বর্তমানে ঈশ্বর যে-পরমদেশ তৈরি করেছেন, সেখানে লোকেরা কোন কোন আশীর্বাদ পায় এবং কেন তারা সেটা ছেড়ে যেতে চায় না? আসুন, তা লক্ষ করি।

যারা এই পরমদেশে থাকে, তারা কোন কোন আশীর্বাদ পায়?

৫. যারা এই পরমদেশের ভিতরে থাকে, তারা কোন কোন আশীর্বাদ পায়? (যিশাইয় ৬৫:১৩)

তারা সুস্থসবল ও সতেজ থাকে। যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী দেখায় যে, যারা এই পরমদেশের ভিতরে রয়েছে আর যারা এর বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৩.) যারা যিহোবার উপাসনা করে, তিনি তাদের সেই সমস্ত কিছু উদারভাবে দেন, যেগুলোর সাহায্যে তারা তাঁর নিকটবর্তী হয়ে থাকবে। তিনি আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তি দেন, তাঁর বাক্য বাইবেল এবং বিভিন্ন প্রকাশনা দেন, যাতে আমরা “ভোজন,” “পান” ও “আনন্দ” করতে পারি। (তুলনা করুন, প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.) কিন্তু, যারা এই পরমদেশের বাইরে রয়েছে, তারা “ক্ষুধার্ত্ত” ও “তৃষ্ণার্ত্ত” এবং তাদের “লজ্জিত” হতে হয়। তারা ঈশ্বরকে জানে না।—আমোষ ৮:১১.

৬. যিহোবা আমাদের জন্য কোন কোন ব্যবস্থা করেছেন আর কীভাবে আমরা তা থেকে উপকার পাই? (যোয়েল ২:২১-২৪)

যোয়েল তার ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর লোকদের শস্য, দ্রাক্ষারস ও তেল এবং এইরকমই প্রয়োজনীয় জিনিস উদারভাবে দেবেন। এর মানে হল, যিহোবা তাঁর লোকদের জন্য এমন ব্যবস্থা করবেন, যেটার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে। (যোয়েল ২:২১-২৪) বর্তমানে, কীভাবে যিহোবা তা করছেন? তিনি বাইবেল, বিভিন্ন প্রকাশনা, সভা, সম্মেলন ও আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনেক কিছু শেখাচ্ছেন। আমরা প্রতিদিন এই ব্যবস্থা থেকে উপকার পেতে পারি এবং সুস্থসবল ও সতেজ থাকতে পারি।

৭. কেন আমরা ‘চিত্তের সুখ’ পাই? (যিশাইয় ৬৫:১৪)

তারা আনন্দিত ও সন্তুষ্ট থাকে। যিহোবার লোকেরা “আনন্দরব” করে কারণ তারা তাঁর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৪.) তিনি আমাদের যে-সত্য শিখিয়েছেন, আমরা তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। তিনি তাঁর বাক্যে এমন প্রতিজ্ঞাগুলো করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সান্ত্বনা পাই। শুধু তা-ই নয়, যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে তিনি আমাদের এক চমৎকার আশা দিয়েছেন। এইসমস্ত কারণে আমরা ‘চিত্তের সুখ’ পাই আর আমরা যখন ভাই-বোনদের সঙ্গে এগুলো নিয়ে কথা বলি, তখন আমাদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়।—গীত. ৩৪:৮; ১৩৩:১-৩.

৮. কোন দুটো কারণে এই পরমদেশ এতটা চমৎকার?

যিহোবার লোকদের মাঝে ভালোবাসা ও একতা রয়েছে এবং এর ফলে এই পরমদেশের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। বাইবেল বলে, এই ভালোবাসা আমাদের “পুরোপুরিভাবে একতাবদ্ধ করে।” এখান থেকে বোঝা যায়, কীভাবে নতুন জগতে সবাই মিলেমিশে থাকবে। সেইসময় আমাদের মাঝে আরও বেশি ভালোবাসা ও একতা থাকবে। (কল. ৩:১৪) একজন বোন বলেছিলেন, প্রথম বার যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল, তখন তার কেমন লেগেছিল। তিনি বলেন, “আমার জীবনে, আমার পরিবারে এক ফোঁটাও আনন্দ ছিল না। ভালোবাসা আসলে কী, সেটা আমি প্রথম বার যিহোবার সাক্ষিদের মাঝেই দেখেছিলাম।” সত্যিই, আমাদের মাঝে থাকা এইরকম একটা চমৎকার পরিবেশ আর কোথাও পাওয়া যায় না! তাই, জগতের লোকেরা আমাদের সম্বন্ধে যা-ই বলুক না কেন, সত্যিটা হল যিহোবার কাছে আমাদের এক সুন্দর “নাম” রয়েছে এবং যারা তাঁর উপাসনা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। (যিশা. ৬৫:১৫) একজন ব্যক্তি যদি সত্যিই আনন্দিত ও সন্তুষ্ট থাকতে চান, তা হলে তাকে অবশ্যই এই পরমদেশে আসতে হবে।

৯. যিশাইয় ৬৫:১৬, ১৭ পদে আমরা কোন প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানতে পারি?

তারা অতিরিক্ত চিন্তা করে না বরং নিশ্চিন্তে থাকে। যিশাইয় তার ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলেছিলেন, যারা এই পরমদেশে আসতে চাইবে না, তারা “চিত্তের দুঃখে ক্রন্দন” করবে এবং “আত্মার ক্ষোভে হাহাকার” করবে। তবে, ঈশ্বরের লোকেরা যে-কারণগুলোর জন্য দুঃখ পায় এবং হতাশ হয়ে পড়ে, সেগুলোর কী হবে? যিশাইয় বলেছিলেন, ঈশ্বরের লোকেরা ‘পূর্ব্বকালীন সমস্ত সঙ্কট ভুলিয়া যাইবে, ও [ঈশ্বরের] দৃষ্টি হইতে তাহা লুকানো হইবে।’ (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৬, ১৭.) যিহোবা আমাদের সমস্ত সমস্যা, দুঃখ এবং এগুলোর কারণে যে-খারাপ স্মৃতিগুলো আমাদের কষ্ট দেয়, সেইসমস্ত কিছু একেবারে দূর করে দেবেন।

১০. আপনি কোন বিষয়ের জন্য কৃতজ্ঞ আর কেন? (ছবিও দেখুন।)

১০ এটা ঠিক যে, পরমদেশে আমরা সবাই পুরোপুরি শান্তিতে জীবনযাপন করব, তবে বর্তমানেও আমরা অতিরিক্ত চিন্তা করা এড়াতে পারি এবং নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। কীভাবে? সভাগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে। আমরা যখন সভায় যাই, তখন আমরা এই জগতের সমস্ত দুশ্চিন্তা ভুলে যাই। আমরা যখন প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দয়া ও মৃদুতার মতো পবিত্র শক্তির ফলের দিকগুলো দেখাই, তখন আমরা সবাই এই পরমদেশে এক আরামদায়ক পরিবেশ ও শান্তি উপভোগ করি। (গালা. ৫:২২, ২৩) সত্যিই আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ যে, আমরা যিহোবার সংগঠনের এক অংশ! যারা এই পরমদেশ ছেড়ে যাবে না, তারা সবাই ভবিষ্যতে সেই ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ দেখার সুযোগ পাবে, যেটার বিষয়ে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন।

এটা কতই-না বড়ো এক সুযোগ যে, আমরা ঈশ্বরের পরিবারের এক অংশ হিসেবে এই পরমদেশ উপভোগ করছি (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন) b


১১. যিশাইয় ৬৫:১৮, ১৯ পদ অনুযায়ী যিহোবা যে আমাদের জন্য পরমদেশ তৈরি করেছেন, এটা জেনে আমাদের কেমন লাগে?

১১ তারা কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত। যিশাইয় এও বলেছিলেন, যিহোবা আমাদের জন্য এই পরমদেশ তৈরি করেছেন বলে আমাদের “আমোদ ও উল্লাস” করা উচিত। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৮, ১৯.) তিনি চান যেন আমরা অন্যদেরও জগতের সংগঠনগুলো ছেড়ে এই সুন্দর পরমদেশে আসতে সাহায্য করি। জগতের সংগঠনগুলো তাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যটা শেখায় না। কিন্তু, আমরা সত্য শেখার ফলে অনেক আনন্দিত এবং এটার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। তাই, আমরা অন্যদেরও এই বিষয়ে বলতে চাই।

১২. যিশাইয় ৬৫:২০-২৪ পদে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী পড়ে আপনার কেমন লাগে আর কেন?

১২ যারা এই পরমদেশে রয়েছে, তারা এই বিষয়টার জন্য খুবই কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত যে, তাদের কাছে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ রয়েছে। কল্পনা করুন, নতুন জগতে আমাদের জীবন কেমন হবে আর আমরা সেখানে কী কী করব! বাইবেল বলে, ‘সেখানে কোনো শিশু মারা যাবে না, কিম্বা কোনো বুড়ো লোক আয়ু শেষ না হলে মরবে না।’ ‘[আমরা] ঘর-বাড়ী তৈরী করে সেখানে বাস করব আর আংগুর ক্ষেত করে তার ফল খাব।’ ‘[আমাদের] পরিশ্রম মিথ্যা হবে না কারণ [আমরা] সদাপ্রভুর আশীর্বাদ পাওয়া লোক হব।’ তিনি আমাদের এক উত্তম জীবন দেবেন এবং এমন কাজ দেবেন, যেটা করে আমরা আনন্দিত হব। ‘[আমরা] ডাকবার আগেই [তিনি] সাড়া দেবেন’ আর আমাদের ‘মনের ইচ্ছা পূরণ করবেন।’—যিশা. ৬৫:২০-২৪; গীত. ১৪৫:১৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

১৩. যিহোবার সেবা করার জন্য লোকেরা নিজেদের মধ্যে কোন কোন পরিবর্তন করেছে? (যিশাইয় ৬৫:২৫)

১৩ তারা ভয়ে ভয়ে থাকে না বরং শান্তিতে থাকে। সত্য শেখার আগে অনেক ভাই-বোনের স্বভাব পশুদের মতো হিংস্র ছিল। কিন্তু, যিহোবার পবিত্র শক্তির সাহায্যে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন করতে পেরেছে। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:২৫.) তারা নিজেদের খারাপ গুণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে এবং নিজেদের শোধরাতে পেরেছে। (রোমীয় ১২:২; ইফি. ৪:২২-২৪) এত কিছু করার পরও যিহোবার সেবকেরা ভুল করে ফেলে। তবে, যিহোবা দারুণ কিছু করেছেন। যিহোবা ‘সমস্ত ধরনের লোককে’ একতার বন্ধনে বেঁধেছেন, তাই তাদের মধ্যে সত্যিকারের ভালোবাসা ও শান্তি রয়েছে। (তীত ২:১১) এমনটা একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই করতে পারেন।

১৪. কীভাবে একজন ভাই যিশাইয় ৬৫:২৫ পদের কথাগুলো তার জীবনে ঘটতে দেখেছে?

১৪ একজন ব্যক্তি কি সত্যিই তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারেন? এক যুবকের উপর মনোযোগ দিন। ২০ বছর হওয়ার আগেই সে অনেক বার জেল খেটেছিল। সে সবসময় ঝগড়া, মারামারি ও অনৈতিক কাজ করত। গাড়ি চুরি করার, ঘরে ঢুকে চুরি করার এবং এইরকমই বিভিন্ন অপরাধের কারণে তার জেল হয়েছিল। সে যে-কারো সঙ্গে মারামারি করতে প্রস্তুত থাকত। কিন্তু, সে যখন প্রথম বার বাইবেল থেকে সত্য সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল এবং যিহোবার সাক্ষিদের সভায় গিয়েছিল, তখন পরমদেশের মতো এই পরিবেশ তার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পেরেছিল, সত্যিকারের সুখী হওয়ার জন্য তাকে যিহোবার উপাসনা করতে হবে এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে হবে। বাপ্তিস্মের পর সে প্রায়ই চিন্তা করত, কীভাবে সে যিশাইয় ৬৫:২৫ পদে লেখা কথাগুলো তার নিজের জীবনে ঘটতে দেখেছে। আগে সে সিংহের মতো হিংস্র ছিল, কিন্তু পরে সে মেষশাবকের মতো হয়েছিল আর সবার সঙ্গে শান্তিতে থাকতে শুরু করেছিল।

১৫. (ক) কেন আমরা চাই যেন যত বেশি সম্ভব লোক আমাদের পরিবারের অংশ হয়? (খ) কীভাবে আমরা এই ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করি?

১৫ যিশাইয় ৬৫:১৩ পদের শুরুতে লেখা আছে: “এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” ২৫ পদে লেখা আছে: “ইহা সদাপ্রভু কহেন।” আর যিহোবার বলা সমস্ত কথা সবসময় সত্যি হয়। (যিশা. ৫৫:১০, ১১) বর্তমানে, আমরা তাঁর সমস্ত কথা সত্যি হতে দেখছি। যিহোবা আমাদের এমন এক পরমদেশ বা পরিবার দিয়েছেন, যেটা আমরা আর কোথাও দেখতে পাই না। আজ এই জগৎ একটা মরুভূমির মতো, কিন্তু আমাদের এই পরিবার সেই মরুভূমিতে থাকা একটা সুন্দর বাগানের মতো। এখানে আমরা সবাই প্রকৃত শান্তি ও সুরক্ষা উপভোগ করছি। (গীত. ৭২:৭) তাই, আমরা যত বেশি সম্ভব লোককে এই পরিবারের অংশ হতে সাহায্য করতে চাই। কীভাবে আমরা তা করি? উদ্যোগের সঙ্গে শিষ্য তৈরির কাজ করার মাধ্যমে।—মথি ২৮:১৯, ২০.

কীভাবে আমরা লোকদের এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত করতে পারি?

১৬. কেন লোকেরা এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত হয়?

১৬ আমাদের প্রত্যেকের একটা দায়িত্ব রয়েছে: এই পরমদেশকে আরও সুন্দর করে তোলা, যাতে লোকেরা এর প্রতি আকর্ষিত হয়। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? যিহোবার মতো হওয়ার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি। তিনি জোর করে কাউকে তাঁর সংগঠনে আনেন না। তিনি ভালোবাসার মাধ্যমে লোকদের “আকর্ষণ” করেন। (যোহন ৬:৪৪; যির. ৩১:৩) সৎহৃদয়ের লোকেরা যখন শেখে যে, যিহোবা সবাইকে কত ভালোবাসেন এবং তাঁর মধ্যে কত ভালো ভালো গুণ রয়েছে, তখন তারা তাঁর বিষয়ে আরও জানতে চায় আর তাঁর প্রতি আপনা-আপনি আকর্ষিত হয়। আমরাও আমাদের ভালো গুণ ও আচার-আচরণের মাধ্যমে লোকদের এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত করি। তাই, এরজন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৭. কীভাবে আমরা এই সুন্দর পরমদেশের প্রতি লোকদের আকর্ষিত করতে পারি?

১৭ এই পরমদেশের প্রতি লোকদের আকর্ষণ করার একটা উপায় হল, ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো এবং তাদের প্রতি ভালো কাজ করা। নতুন লোকেরা যখন আমাদের সভায় আসে, তখন তারা যেন আমাদের মধ্যে ভালোবাসা দেখতে পায়। সেইসময় তারা সেই লোকদের মতো অনুভব করবে, যারা করিন্থের মণ্ডলীতে এসেছিল আর বলেছিল: “ঈশ্বর সত্যিই তোমাদের মধ্যে রয়েছেন।” (১ করি. ১৪:২৪, ২৫; সখ. ৮:২৩) তাই আসুন, আমরা বাইবেলের এই পরামর্শ পুরোপুরি মেনে চলার জন্য যথাসাধ্য করি: “একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে বাস করো।”—১ থিষল. ৫:১৩.

১৮. কী দেখে লোকেরা এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত হবে?

১৮ আমাদের যিহোবার মতো করে ভাই-বোনদের দেখতে হবে। যিহোবার মতো আমাদেরও তাদের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে, তাদের খারাপ বিষয়গুলোর উপর নয়। আর এমনিতেও, পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে এই খারাপ বিষয়গুলো থাকবে না। তাই, আমরা যদি ‘একে অন্যের প্রতি সদয় হই, কোমল সমবেদনা দেখাই, পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করি,’ তা হলে কারো সঙ্গে সমস্যা হলে আমরা সেটা মিটমাট করতে পারব। (ইফি. ৪:৩২) আমাদের আচার-আচরণ দেখে লোকেরা এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত হবে কারণ তারাও চায়, তাদের প্রতিও এইরকম আচরণ করা হোক। a

এই পরমদেশ ছেড়ে যাবেন না!

১৯. (ক) এই পরমদেশে ফিরে আসার পর অনেক লোক কী বলেছে? (“ তারা ছেড়ে চলে গিয়েছিল, কিন্তু পরে ফিরে এসেছে” বক্সটা দেখুন।) (খ) আপনি কী স্থির করেছেন? (ছবিও দেখুন।)

১৯ যিহোবা আমাদের যে পরমদেশ দিয়েছেন এবং সেখানে থাকার সুযোগ দিয়েছেন, এটার জন্য আমরা সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ। দিনের পর দিন এর সৌন্দর্য আরও বাড়ছে এবং এখানে এসে অনেক লোক তাঁর উপাসনা করছে। কেউ যদি আনন্দিত ও সতেজ হতে চায়, নিশ্চিন্তে থাকতে চায় এবং সুরক্ষিত থাকতে চায়, তা হলে তাকে এই পরমদেশে আসতে হবে আর স্থির করতে হবে যে, সে কখনো এটা ছেড়ে যাবে না! তবে, আমাদের শয়তানের কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে। সে আমাদের প্রলোভিত করার চেষ্টা করে যেন আমরা এই পরমদেশ ছেড়ে চলে যাই। (১ পিতর ৫:৮; প্রকা. ১২:৯) কিন্তু, আমরা শয়তানের ফাঁদে পা দেব না। তাই আসুন, আমরা সবাই এই পরমদেশকে সুন্দর ও শুদ্ধ রাখার এবং সবার সঙ্গে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করে চলি।

বর্তমানে যারা পরমদেশের মতো এই পরিবেশে রয়েছে, তারা ভবিষ্যতে সত্যিকারের পরমদেশও উপভোগ করবে (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)


আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

  • যিহোবা আমাদের যে-পরমদেশ দিয়েছেন, সেটা কী?

  • এই পরমদেশে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পাই?

  • কীভাবে আমরা লোকদের এই পরমদেশের প্রতি আকর্ষিত করতে পারি?

গান ১৪৪ থাকলে স্থির পাবে পুরস্কার!

a যিহোবার লোকদের মাঝে থাকার ফলে একজন বোন কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছেন, তা জানার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে তারা এখন কী করছেন? আলেনা জিতনিকোভা: আমার স্বপ্ন যেভাবে সত্যি হয়েছে ভিডিওটা দেখুন।

b ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা,: সভাতে অনেক ভাই-বোন একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে, কিন্তু এক জন ভাই একা বসে আছেন এবং কারো সঙ্গে কথা বলছেন না।