সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অরিমাথিয়ার যোষেফ সত্যের পক্ষে পদক্ষেপ নেন

অরিমাথিয়ার যোষেফ সত্যের পক্ষে পদক্ষেপ নেন

অরিমাথিয়ার যোষেফ বুঝতেই পারছিলেন না যে, কীভাবে তিনি রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাতের সঙ্গে কথা বলার সাহস খুঁজে পেয়েছিলেন। পীলাত খুবই একগুঁয়ে লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশুকে সম্মানের সঙ্গে কবর দেওয়ার জন্য কাউকে-না-কাউকে পীলাতের কাছ থেকে যিশুর দেহ চাইতেই হবে। কিন্তু, পীলাতের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার পর যোষেফ দেখেছিলেন যে, তিনি বিষয়টাকে যতটা কঠিন বলে মনে করেছিলেন, সেটা আসলে ততটাও কঠিন ছিল না। যিশু যে মারা গিয়েছেন, সেই বিষয়ে একজন শতপতির কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর, পীলাত যোষেফের অনুরোধ মেনে নিয়েছিলেন। তাই যোষেফ, যিনি তখনও খুবই দুঃখের মধ্যে ছিলেন, তাড়াতাড়ি করে সেই জায়গায় ফিরে গিয়েছিলেন, যেখানে যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।—মার্ক ১৫:৪২-৪৫.

  • এই অরিমাথিয়ার যোষেফ কে?

  • তার সঙ্গে যিশুর কীরকম সম্পর্ক ছিল?

  • আর তার বিবরণের বিষয়ে কেন আপনার আগ্রহী হওয়া উচিত?

মহাসভার একজন সদস্য

ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় মার্ক লিখিত সুসমাচার বলে যে, যোষেফ যিহুদি উচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রশাসনগোষ্ঠী “[“মহাসভার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] এক জন সম্ভ্রান্ত মন্ত্রী” ছিলেন। (মার্ক ১৫:১, ৪৩) তাই, যোষেফ লোকেদের মাঝে একজন নেতা ছিলেন আর এই কারণেই তিনি রোমীয় দেশাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে পেরেছিলেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যোষেফ ধনীও ছিলেন।—মথি ২৭:৫৭.

যিশুকে আপনার রাজা হিসেবে স্বীকার করার মতো সাহস কি আপনার রয়েছে?

একটা দল হিসেবে মহাসভার সদস্যরা যিশুর বিরোধিতা করত। তারা তাঁকে মেরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু, যোষেফকে “এক জন সৎ ও ধার্ম্মিক লোক” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (লূক ২৩:৫০) মহাসভায় তার বেশিরভাগ সহকর্মীর বিপরীতে তিনি সততা ও নৈতিকতা বজায় রেখে জীবনযাপন করতেন এবং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার জন্য যথাসাধ্য করতেন। এ ছাড়া, তিনি “ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেন” আর হয়তো এই কারণেই তিনি যিশুর একজন শিষ্য হয়েছিলেন। (মার্ক ১৫:৪৩; মথি ২৭:৫৭) সম্ভবত, সত্য ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে আন্তরিকভাবে আকাঙ্ক্ষী হওয়ার কারণেই তিনি যিশুর বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

একজন গুপ্ত শিষ্য

যোহন ১৯:৩৮ পদ বলে, যোষেফ “যীশুর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু যিহূদীদের ভয়ে গুপ্তভাবেই ছিলেন।” কোন বিষয়টা নিয়ে যোষেফ ভয়ের মধ্যে ছিলেন? তিনি জানতেন, যিহুদিরা যিশুকে ঘৃণা করত এবং যদি কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে স্বীকার করতেন যে, তিনি যিশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, তা হলে তাকে সমাজগৃহ থেকে বের করে দেওয়া হতো। (যোহন ৭:৪৫-৪৯; ৯:২২) সমাজগৃহ থেকে বের করে দেওয়ার অর্থ ছিল অন্যান্য যিহুদিরা সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করবে, তার সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলবে এবং তার সঙ্গে সমাজচ্যুত ব্যক্তির মতো আচরণ করবে। তাই, যোষেফ প্রকাশ্যে যিশুর প্রতি তার বিশ্বাস স্বীকার করতে ইতস্তত করেছিলেন। তা করার অর্থ হবে তার পদমর্যাদা ও খ্যাতি হারিয়ে ফেলা।

কেবল যোষেফই যে এইরকম দ্বিধার মধ্যে ছিলেন, এমন নয়। যোহন ১২:৪২ পদ অনুসারে “অধ্যক্ষদের মধ্যেও অনেকে [যিশুতে] বিশ্বাস করিল; কিন্তু ফরীশীদের ভয়ে স্বীকার করিল না, পাছে সমাজচ্যুত হয়।” আরেকজন ব্যক্তি, যিনি একই পরিস্থিতিতে ছিলেন, তিনি হলেন নীকদীম। তিনিও মহাসভার একজন সদস্য ছিলেন।—যোহন ৩:১-১০; ৭:৫০-৫২.

তবে, যোষেফ একজন শিষ্য ছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সবার সামনে তা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। এটা ছিল একটা গুরুতর সমস্যা কারণ যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে স্বীকার করিব। কিন্তু যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব।” (মথি ১০:৩২, ৩৩) যদিও যোষেফ সরাসরি যিশুকে অস্বীকার করেননি, কিন্তু তিনি যে যিশুকে বিশ্বাস করতেন, সেটা স্বীকার করার সাহসও তার ছিল না। আপনার কি এইরকম সাহস রয়েছে?

বাইবেল যোষেফের পক্ষে এই সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি যিশুর বিরুদ্ধে করা মহাসভার সদস্যদের চক্রান্তকে সমর্থন করেননি। (লূক ২৩:৫১) কেউ কেউ যেমন বলে থাকে, যোষেফ হয়তো যিশুর বিচারের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যা-ই হোক না কেন, যোষেফ নিশ্চয়ই সেই চরম অবিচারের কারণে প্রচণ্ড দুঃখ পেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি সেটা থামানোর জন্য কিছুই করতে পারেননি!

তিনি দ্বিধা কাটিয়ে ওঠেন

মনে হয়, যিশুর মৃত্যুর সময় যোষেফ তার ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন এবং যিশুর অনুসারীদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা মার্ক ১৫:৪৩ পদের কথাগুলোতে ইঙ্গিত পাই, যেখানে বলা হয়েছে: “তিনি সাহসপূর্ব্বক পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন।”

সম্ভবত, যিশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যোষেফ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। স্পষ্টতই, যিশু যে মারা গিয়েছেন, এই বিষয়ে পীলাতের কাছে খবর আসার আগেই, যোষেফ সেই সম্বন্ধে জানতেন। তাই, যোষেফ যখন দেশাধ্যক্ষের কাছে যিশুর দেহ চেয়েছিলেন, তখন “যীশু যে এত শীঘ্র মরিয়া গিয়াছেন, ইহাতে [তিনি] আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন।” (মার্ক ১৫:৪৪) যোষেফ যদি যাতনাদণ্ডে যিশুর প্রচণ্ড যন্ত্রণা দেখে থাকেন, তা হলে সেই মর্মান্তিক দৃশ্যটা কি তাকে তার বিবেক পরীক্ষা করে দেখতে ও অবশেষে সত্যের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল? সম্ভবত। যা-ই হোক না কেন, যোষেফ কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি আর যিশুর একজন গুপ্ত শিষ্য থাকবেন না।

যোষেফ যিশুকে কবর দেন

যিহুদি আইন অনুসারে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সূর্যাস্তের আগেই কবর দিতে হতো। (দ্বিতীয়. ২১:২২, ২৩) কিন্তু, রোমীয়রা অপরাধীদের দেহ দণ্ডেই ঝুলিয়ে রেখে দিত আর পরে সেটা পচে যেত অথবা তারা কোনো সাধারণ কবরে সেটা ফেলে দিত। কিন্তু, যোষেফ চাননি যে, যিশুর দেহের প্রতি এমনটা ঘটুক। যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো, সেই স্থানের কাছাকাছিই পাথর কেটে বানানো যোষেফের একটা নতুন কবর ছিল। এই কবর কখনো ব্যবহৃত হয়নি আর এই বিষয়টা হয়তো নির্দেশ করে যে, যোষেফ সম্প্রতি অরিমাথিয়া * থেকে যিরূশালেমে বাস করার জন্য এসেছিলেন এবং তিনি সেই স্থানটাকে তার পরিবারের সদস্যদের কবর দেওয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। (লূক ২৩:৫৩; যোহন ১৯:৪১) যোষেফ তার নিজের ভাবী কবরে যিশুর দেহকে কবর দেওয়ার মাধ্যমে উদারতা দেখিয়েছিলেন এবং এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন যে, মশীহকে “ধনবানের” সঙ্গে কবর দেওয়া হবে।—যিশা. ৫৩:৫, ৮, ৯.

এমন কিছু কি রয়েছে, যেটাকে আপনি যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্কের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?

সুসমাচারের চারটে বইয়ের বিবরণই দেখায় যে, দণ্ড থেকে যিশুর দেহ নামানোর পর, যোষেফ সেটাকে চাদরে জড়িয়েছিলেন এবং তার নিজের কবরে যিশুকে কবর দিয়েছিলেন। (মথি ২৭:৫৯-৬১; মার্ক ১৫:৪৬, ৪৭; লূক ২৩:৫৩, ৫৫; যোহন ১৯:৩৮-৪০) যোষেফকে সাহায্য করার বিষয়ে একমাত্র যে-ব্যক্তি সম্বন্ধে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হলেন নীকদীম। নীকদীম কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সুগন্ধি দ্রব্য নিয়ে এসেছিলেন। যেহেতু এই দু-জন ব্যক্তির উচ্চ পদমর্যাদা ছিল, তাই মনে হয় না যে, তারা নিজেরা যিশুর দেহ বহন করেছিলেন। খুব সম্ভবত, তারা যিশুর দেহ নিয়ে যাওয়ার ও তাঁকে কবর দেওয়ার জন্য তাদের দাসদের ব্যবহার করেছিলেন। তারা যদি দাসদের ব্যবহার করেও থাকেন, তা সত্ত্বেও এই দু-জন পুরুষের কাজকে কোনোভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা যায় না। যিহুদিদের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মৃতদেহ স্পর্শ করলে সাত দিনের জন্য অশুচি হয়ে যেতেন এবং তিনি যা-কিছু স্পর্শ করতেন, সেগুলোও অশুচি হয়ে যেত। (গণনা. ১৯:১১; হগয় ২:১৩) যোষেফ ও নীকদীম অশুচি অবস্থায় থাকলে নিস্তারপর্বের সপ্তাহের সময় তাদের সবার কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো এবং তারা নিস্তারপর্বের সমস্ত উদ্‌যাপন থেকে বঞ্চিত হতেন। (গণনা. ৯:৬) যিশুকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে যোষেফ তার সহকর্মীদের চোখে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হওয়ার ঝুঁকিও নিয়েছিলেন। কিন্তু, সেইসময় তিনি যিশুকে সম্মানের সঙ্গে কবর দেওয়ার এবং খোলাখুলিভাবে নিজেকে খ্রিস্টের একজন শিষ্য হিসেবে প্রকাশ করার পরিণতি ভোগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।

যোষেফের বিবরণের শেষ

সুসমাচারের বইয়ে উল্লেখিত যিশুকে কবর দেওয়ার বিবরণের পরে যোষেফের বিষয়ে আর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই, স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠে আসে: “তার প্রতি কী ঘটেছিল?” সত্য বিষয়টা হল, আমরা তা জানি না। তবে, উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলোর ভিত্তিতে এমনটা মনে করার দৃঢ় কারণ রয়েছে যে, তিনি খোলাখুলিভাবে নিজেকে খ্রিস্টান হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন। আসলে, পরীক্ষা ও সংকটের সেই মুহূর্তগুলোতে তার বিশ্বাস ও সাহস কমে যায়নি বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। এটা একটা ভালো লক্ষণ ছিল।

এই বিবরণ এমন একটা প্রশ্ন উত্থাপন করে, যেটা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করা আমাদের সকলের জন্য ভালো হবে: এমন কিছু কি রয়েছে—হোক তা আমাদের পদমর্যাদা, কেরিয়ার, বিষয়সম্পত্তি, পারিবারিক স্নেহের সম্পর্ক অথবা এমনকী আমাদের স্বাধীনতা—যেটাকে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি?

^ অনু. 18 মনে করা হয়, অরিমাথিয়া নগর হল সম্ভবত রামা নগর, যেটা বর্তমানে রেনটিস (রানটিস) নামে পরিচিত। এটা ছিল ভাববাদী শমূয়েলের নিজের শহর, যেটা যিরূশালেম থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (২২ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ছিল।—১ শমূ. ১:১৯, ২০.