সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার ভার যিহোবার উপর ফেলে দিন

আপনার সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার ভার যিহোবার উপর ফেলে দিন

“তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার [ঈশ্বরের] উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭.

গান সংখ্যা: ২৩, ৩২

১, ২. (ক) কেন আমরা উদ্‌বিগ্ন হই? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

বর্তমানে, শয়তান “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮; প্রকা. ১২:১৭) ফল স্বরূপ, মানুষের জীবন অত্যন্ত চাপপূর্ণ হয়ে উঠেছে আর এমনকী ঈশ্বরের দাসেরাও উদ্‌বিগ্ন হয়। অতীতেও ঈশ্বরের দাসদের একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেল বলে, রাজা দায়ূদ মাঝে মাঝে উদ্‌বিগ্ন হয়েছিলেন। (গীত. ১৩:২) আর “সমস্ত মণ্ডলীর” জন্য প্রেরিত পৌলেরও “চিন্তা” ছিল। (২ করি. ১১:২৮) কিন্তু, আমরা যখন উদ্‌বিগ্নতার দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়ি, তখন আমরা কী করতে পারি?

আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা অতীতে তাঁর দাসদের উদ্‌বিগ্নতা থেকে স্বস্তি লাভ করতে সাহায্য করেছিলেন আর বর্তমানে তিনি আমাদের জন্যও একই বিষয় করতে চান। বাইবেল আমাদের জোরালো পরামর্শ দেয়: “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) কিন্তু, কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? আমরা চারটে উপায় বিবেচনা করব। (১) আপনি প্রার্থনা করতে পারেন, (২) ঈশ্বরের বাক্য পড়তে ও ধ্যান করতে পারেন, (৩) যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন এবং (৪) এমন কারো কাছে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন, যার উপর আপনার আস্থা রয়েছে। এই চারটে উপায় নিয়ে পরীক্ষা করার সময়, আপনি কোন ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতি করতে চান, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

“তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর”

৩. কীভাবে আপনি “সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ” করতে পারেন?

প্রথম যে-উপায়ে আমরা যিহোবার উপর আমাদের উদ্‌বিগ্নতার ভার ফেলে দিতে পারি তা হল, আন্তরিক প্রার্থনা করার মাধ্যমে। আপনি যখন উদ্‌বিগ্ন থাকেন, তখন আপনার প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা চান, যেন আপনি হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি তাঁর কাছ প্রকাশ করেন। গীতরচক দায়ূদ যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনায় কর্ণপাত কর।” একই গীতে দায়ূদ এটাও বলেছিলেন: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।” (গীত. ৫৫:১, ২২) কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য করার পর, যিহোবার কাছে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করা উদ্‌বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। কিন্তু, প্রার্থনা কীভাবে কাজ করে? কীভাবে প্রার্থনা আমাদের উদ্‌বিগ্নতার দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে?—গীত. ৯৪:১৮, ১৯.

৪. আমরা যখন উদ্‌বিগ্ন থাকি, তখন প্রার্থনা করা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদ পড়ুন। কীভাবে যিহোবা আপনার আন্তরিক ও অবিরাম প্রার্থনার প্রতি সাড়া দেন? তিনি আমাদের শান্ত থাকতে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারেন। উদ্‌বিগ্ন হওয়ার ও ভয় পাওয়ার পরিবর্তে ঈশ্বর আমাদের এইরকম মনের শান্তি লাভ করতে সাহায্য করতে পারেন, যা আমরা কখনো চিন্তাও করতে পারি না। আমাদের অনেক ভাই ও বোন এমন শান্ত মনোভাব বজায় রাখতে পেরেছে। আপনারও একই অভিজ্ঞতা হতে পারে। “ঈশ্বরের শান্তি” আপনাকে যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে! আপনি যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন: “ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১০.

ঈশ্বরের বাক্য থেকে প্রাপ্ত মনের শান্তি

৫. কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য আপনার উদ্‌বিগ্নতা কমিয়ে মনের শান্তি লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

উদ্‌বিগ্নতা কমিয়ে মনের শান্তি লাভ করার দ্বিতীয় উপায় হল, বাইবেলের পদ পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা। কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য। বাইবেলের মধ্যে আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে বিজ্ঞতাপূর্ণ ও ব্যাবহারিক পরামর্শ রয়েছে। আপনি যখনই উদ্‌বিগ্ন হন, তখনই ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন ও তাঁর পরামর্শ কীভাবে আপনাকে শক্তিশালী করতে পারে, তা নিয়ে ধ্যান করতে পারেন। এটা আপনাকে উদ্‌বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে, তা কমাতে আর এমনকী তা এড়িয়ে চলতেও সাহায্য করতে পারে। যিহোবা সুনির্দিষ্টভাবে দেখিয়েছেন, তাঁর বাক্য পড়ে আমরা “মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ” হই না বরং “বলবান” হই ও “সাহস” অর্জন করি।—যিহো. ১:৭-৯.

৬. যিশুর কথা পড়ে আপনি কীভাবে উপকৃত হতে পারেন?

ঈশ্বরের বাক্য পড়ে আমরা জানতে পারি, যিশু কীভাবে লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। লোকেরা তাঁর কথা শুনতে পছন্দ করত কারণ তাঁর কথা সান্ত্বনাদায়ক ও সতেজতাদায়ক ছিল, বিশেষভাবে দুর্বল ও হতাশাগ্রস্ত লোকেদের কাছে। (পড়ুন, মথি ১১:২৮-৩০.) অন্যেরা কেমন অনুভব করে, সেই বিষয় নিয়ে যিশু অনেক চিন্তা করতেন। (মার্ক ৬:৩০-৩২) যিশু যেমন তাঁর সঙ্গে থাকা প্রেরিতদের সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তেমনই তিনি বর্তমানে আমাদেরও সাহায্য করবেন। তবে, উপকার লাভ করার জন্য যিশুকে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে, এমন নয়। আমাদের রাজা হিসেবে স্বর্গ থেকে যিশু আমাদের প্রতি ক্রমাগত প্রেম প্রকাশ করছেন। তাই, আপনি যখন উদ্‌বিগ্ন হন, তখন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, তিনি আপনার সঙ্গে থাকবেন ও উপযুক্ত সময়ে আপনাকে সাহায্য করবেন। যিশু আমাদের আশা ও সাহস প্রদান করেন, যা উদ্‌বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে আমাদের সাহায্য করে।—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৬.

ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে যে-গুণাবলি গড়ে তোলা যায়

৭. ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা লাভ করে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আমরা যদি যাচ্ঞা করি, তা হলে আমাদের পিতা আমাদের পবিত্র আত্মা দান করবেন। (লূক ১১:১০-১৩) উদ্‌বিগ্নতা কমানোর এই তৃতীয় উপায় কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে? ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বা সক্রিয় শক্তি আমাদের সেই ইতিবাচক গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যে-গুণাবলি আমাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের রয়েছে। (কল. ৩:১০) বাইবেলে এই গুণাবলিকে “আত্মার ফল” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:২২, ২৩.) আমরা যখন এই গুণাবলি গড়ে তুলব, তখন অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হবে আর আমরা এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারব, যা উদ্‌বিগ্নতা নিয়ে আসতে পারে। আসুন আমরা দেখি, কীভাবে আত্মার ফল আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট উপায়ে সাহায্য করবে।

৮-১২. কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফল আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

“প্রেম, আনন্দ, শান্তি।” আপনি যখন অন্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আচরণ করবেন, তখন আপনি দেখতে পাবেন, আপনার কম উদ্‌বিগ্নতা রয়েছে। কেন? আপনি যখন ভ্রাতৃপ্রেম, কোমল স্নেহ ও সমাদর বা সম্মান দেখান, তখন আপনি প্রায়ই এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারেন, যা আপনার মধ্যে নেতিবাচক অনুভূতি যেমন রাগ, হতাশা ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আপনার পক্ষে অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখা সহজ হবে।—রোমীয় ১২:১০.

“দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য [“দয়া,” NW], মঙ্গলভাব।” বাইবেল বলে: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর।” (ইফি. ৪:৩২) আমরা যখন এই পরামর্শ অনুসরণ করব, তখন অন্যদের সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে আর আমরা এমন পরিস্থিতি এড়াতে পারব, যা আমাদের উদ্‌বিগ্ন করতে পারে। এ ছাড়া, আমাদের অসিদ্ধতার কারণে দেখা দেয় এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে।

১০ “বিশ্বস্ততা [“বিশ্বাস,” NW]।” বর্তমানে, আমরা প্রায়ই টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয়ের ব্যাপারে উদ্‌বিগ্ন থাকি। (হিতো. ১৮:১১) কীভাবে আমরা এই ধরনের উদ্‌বিগ্নতা এড়িয়ে চলতে পারি? আমাদের ‘যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিবার’ বিষয়ে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। যিহোবার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস আমাদের এই আস্থা রাখতে সাহায্য করবে, তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” তাই, আমরা পৌলের মতো বলতে পারি: “প্রভু [ঈশ্বর] আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?”—ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.

১১ “মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” মৃদুতা ও ইন্দ্রিয়দমন দেখানো আপনার জন্য কতটা ব্যাবহারিক ও সাহায্যকারী হতে পারে, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। এই গুণগুলো আপনাকে এমন কিছু করা অথবা বলা থেকে বিরত করবে, যা আপনাকে উদ্‌বিগ্ন করতে পারে। এ ছাড়া, আপনি “কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা” এড়িয়ে চলার মাধ্যমে উপকৃত হবেন।—ইফি. ৪:৩১.

১২ “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের” উপর নির্ভর করার জন্য ও ‘আপনার সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেওয়ার’ জন্য আপনার নম্রতা প্রয়োজন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) আপনি যদি নম্র হন, তা হলে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করবেন ও আপনার যত্ন নেবেন। আপনি যখন বুঝতে পারেন, আপনি কোনটা করতে পারেন ও কোনটা করতে পারেন না, তখন আপনি নিজের উপর নয় বরং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করবেন। আর আপনি যেহেতু ঈশ্বরের উপর নির্ভর করবেন, তাই আপনার উদ্‌বিগ্নতা কমে যাবে।—মীখা ৬:৮.

“ভাবিত হইও না”

১৩. যিশু যখন বলেছিলেন, “ভাবিত হইও না,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

১৩ মথি ৬:৩৪ পদ পড়ুন। এই পদে আমরা যিশুর কাছ থেকে বিজ্ঞ পরামর্শ পাই: “ভাবিত হইও না।” আমাদের পক্ষে এই পরামর্শ প্রয়োগ করা অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, যিশু আসলে কী বুঝিয়েছিলেন? আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, দায়ূদ ও পৌল কখনো কখনো উদ্‌বিগ্ন হয়েছিলেন। তাই যিশু এটা বোঝাতে চাননি, ঈশ্বরের দাসেরা কখনো উদ্‌বিগ্ন হবে না। এর পরিবর্তে, যিশু তাঁর দাসদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, অযথা বা অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন হয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, তাই খ্রিস্টানদের অতীত অথবা ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তা করে আরও বেশি উদ্‌বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। কীভাবে যিশুর পরামর্শ আপনাকে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন হওয়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে?

১৪. দায়ূদের মতো, আপনি কীভাবে উদ্‌বিগ্নতা কমাতে পারেন?

১৪ মাঝে মাঝে, লোকেরা তাদের অতীতের ভুলের কারণে উদ্‌বিগ্ন হয়। তারা যা করেছিল, সেটার জন্য তারা হয়তো চরম অপরাধবোধে ভোগে, এমনকী অনেক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের সেই অনুভূতি দূর হয় না। রাজা দায়ূদ কখনো কখনো তার ভুলের কারণে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন: “আমি . . . চিত্তের ব্যাকুলতায় আর্ত্তনাদ করিতেছি।” (গীত. ৩৮:৩, ৪, ৮, ১৮) সেই পরিস্থিতিতে দায়ূদ এমন কিছু করেছিলেন, যা বিজ্ঞতাপূর্ণ ছিল। তিনি যিহোবার করুণা ও ক্ষমার উপর নির্ভর করেছিলেন। আর এরপর দায়ূদ এটা জেনে আনন্দিত ছিলেন, ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করেছেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:১-৩, .

১৫. (ক) দায়ূদের কাছ থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি? (খ) উদ্‌বিগ্নতা কমানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন? (“ উদ্‌বিগ্নতা কমানোর কিছু ব্যাবহারিক উপায়” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১৫ অন্যদিকে, আপনি হয়তো বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্‌বিগ্ন হতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দায়ূদ যখন গীতসংহিতার ৫৫ গীত লিখেছিলেন, তখন তিনি এই ভয় পেয়েছিলেন, তাকে হত্যা করা হতে পারে। (গীত. ৫৫:২-৫) তা সত্ত্বেও, উদ্‌বিগ্নতার কারণে তিনি যিহোবার উপর নিজের আস্থা হারিয়ে ফেলেননি। দায়ূদ নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তবে তিনি এটাও জানতেন, নিজের পরিস্থিতির ব্যাপারে তাকেও কিছু করতে হবে। (২ শমূ. ১৫:৩০-৩৪) দায়ূদের কাছ থেকে আপনি একটা শিক্ষা লাভ করতে পারেন। উদ্‌বিগ্নতার দ্বারা নিজেকে ভারগ্রস্ত হতে দেওয়ার পরিবর্তে, সমস্যাটা সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য করুন আর এই আস্থা রাখুন, যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন।

১৬. কীভাবে ঈশ্বরের নামের অর্থ আপনার বিশ্বাসকে দৃঢ় করে?

১৬ মাঝে মাঝে, একজন খ্রিস্টান হয়তো সম্ভাব্য সমস্যার ব্যাপারে চিন্তা করে উদ্‌বিগ্ন হতে পারেন। কিন্তু, যেটা এখনও ঘটেনি, সেটা নিয়ে আপনার উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন? কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে আমরা মনে করেছিলাম, ততটা খারাপ হয় না। আর এটাও মনে রাখবেন, এমন কোনো পরিস্থিতি নেই, যা ঈশ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাঁর নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” (যাত্রা. ৩:১৪) তাই, আমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ ঈশ্বরের নাম প্রকাশ করে, মানুষের জন্য তাঁর সমস্ত উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ঈশ্বর আশীর্বাদ করবেন এবং তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের উদ্‌বিগ্নতা কমাতে সাহায্য করবেন।

এমন কারো সঙ্গে কথা বলুন, যার উপর আপনার আস্থা রয়েছে

১৭, ১৮. আপনি যখন উদ্‌বিগ্ন হন, তখন উত্তম ভাববিনিময় কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

১৭ চতুর্থ যে-উপায়ে উদ্‌বিগ্নতার সময়ে আপনি সাহায্য লাভ করতে পারেন তা হল, আপনার আস্থা রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অকপটে কথা বলা। আপনার বিবাহসাথি, কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা মণ্ডলীর কোনো প্রাচীন হয়তো আপনাকে আপনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারেন। বাইবেল আমাদের বলে: “মনুষ্যের মনোব্যথা মনকে নত করে; কিন্তু উত্তম বাক্য তাহা হর্ষযুক্ত করে।” (হিতো. ১২:২৫) আর বাইবেল এটাও বলে: “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়; কিন্তু মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।”—হিতো. ১৫:২২.

১৮ এ ছাড়া, আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলোও আমাদের উদ্‌বিগ্নতা কমাতে পারে। প্রতি সপ্তাহের সভাগুলোতে আপনি আপনার ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে থাকেন, যারা আপনার জন্য চিন্তা করে ও আপনাকে উৎসাহিত করতে চায়। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) “উভয় পক্ষের . . . আশ্বাস” বা উৎসাহ আপনাকে শক্তিশালী করবে এবং আপনার পক্ষে উদ্‌বিগ্নতা কাটিয়ে ওঠা আরও সহজ হবে।—রোমীয় ১:১২.

ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক হল আপনার সবচেয়ে বড়ো শক্তি

১৯. ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক যে আপনাকে শক্তিশালী করবে, সেই বিষয়ে কেন আপনি আস্থা রাখতে পারেন?

১৯ যিহোবার উপর নিজের উদ্‌বিগ্নতার ভার ফেলে দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা কানাডার একজন প্রাচীন বুঝতে পেরেছিলেন। স্কুলের একজন শিক্ষক ও ছাত্র উপদেষ্টা হওয়ায় কর্মস্থলে তাকে চাপের মধ্যে থাকতে হতো আর তার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি উদ্‌বিগ্ন থাকতেন। কী তাকে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছিল? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি যিহোবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া, কঠিন সময়ে প্রকৃত বন্ধুরা তাকে অনেক সাহায্য করেছিল এবং তিনি নিজের স্ত্রীর কাছে অকপটে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। আর সহপ্রাচীনরা ও সীমা অধ্যক্ষ তাকে তার পরিস্থিতি সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করেছিলেন। তা ছাড়া, একজন ডাক্তার এই ভাইকে তার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি সম্বন্ধে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন এবং ভাই নিজের তালিকা পরিবর্তন করে মানসিক চাপ হালকা করার ও ব্যায়াম করার জন্য সময় বের করে নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে, তিনি পরিস্থিতি ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছিলেন। যখন কোনো পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তখন তিনি সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেন।

২০. (ক) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের উপর আমাদের উদ্‌বিগ্নতার ভার ফেলে দিতে পারি? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

২০ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার এবং তাঁর বাক্য পড়া ও ধ্যান করার মাধ্যমে ঈশ্বরের উপর আমাদের উদ্‌বিগ্নতার ভার ফেলে দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা এই প্রবন্ধ থেকে শিখেছি। এ ছাড়া, আমরা এটাও শিখতে পেরেছি, যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্য গ্রহণ করা, আস্থাবান কারো সঙ্গে কথা বলা ও খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরের প্রবন্ধ থেকে আমরা শিখতে পারব, কীভাবে যিহোবা এক পুরস্কারের প্রত্যাশা দান করার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন।—ইব্রীয় ১১:৬.