সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তিনি বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন

তিনি বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন

তাদের বিশ্বাস অনু করণ করুন

তিনি বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন

 এলিয় জনতার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, যখন তারা কষ্ট করে কর্মিল পর্বতের ঢাল বেয়ে উঠছিল। এমনকি ভোরের আলোতেও সেই দরিদ্র ও ক্ষুধাক্লিষ্ট লোকেদের যন্ত্রণা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের খরা তাদের ওপর এক মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।

সেই জনতার মধ্যে বালের ৪৫০ জন ভাববাদী সদর্পে এগিয়ে আসছিল, যারা খুবই অহংকারী ছিল এবং যিহোবার ভাববাদী এলিয়কে প্রচণ্ড ঘৃণা করত। রানি ঈষেবল যদিও যিহোবার অনেক দাসকে হত্যা করেছিলেন, তবুও এই ব্যক্তি দৃঢ়তার সঙ্গে বাল উপাসনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, কত সময়ের জন্য? সম্ভবত সেই যাজকরা যুক্তি করেছিল যে, একজন ব্যক্তি একা কখনোই তাদের সকলের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। (১ রাজাবলি ১৮:৩, ১৯, ২০) রাজা আহাবও তার রাজকীয় রথে চড়ে এসেছিলেন। তিনিও এলিয়কে মোটেই পছন্দ করতেন না।

সত্য উপসনার পক্ষসমর্থনকারী এই একমাত্র ভাববাদীর সামনে এমন একটা দিন আসতে যাচ্ছিল, যা তার জীবনে আগে কখনো আসেনি। এলিয় যেমন দেখেছিলেন, ভাল ও মন্দের মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় সংঘর্ষের জন্য এক মঞ্চ স্থাপন করা হচ্ছিল, যেধরনের সংঘর্ষ জগৎ আগে কখনো ঘটতে দেখেনি। সেই দিনটা যতই এগিয়ে আসছিল, তিনি কেমন বোধ করছিলেন? তিনি “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য” ছিলেন আর তাই তিনি নিঃশঙ্ক ছিলেন না। (যাকোব ৫:১৭) অন্ততপক্ষে আমরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি: চারপাশে অবিশ্বাসী লোক, তাদের ধর্মভ্রষ্ট রাজা এবং সেই ঘাতক যাজকরা থাকায় এলিয় খুব ভালমতোই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি একদম একা।—১ রাজাবলি ১৮:২২.

কোন বিষয়টা ইস্রায়েলকে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলেছিল? আর বর্তমানে এই বিবরণ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন? বাইবেল আমাদেরকে ঈশ্বরের একনিষ্ঠ দাসদের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে ও “তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী” হতে জোরালো পরামর্শ দেয়। (ইব্রীয় ১৩:৭) এখন এলিয়ের উদাহরণ বিবেচনা করুন।

এক দীর্ঘ লড়াই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়

জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরে এলিয় অসহায়ভাবে দেখেছেন যে, তার দেশের এবং তার লোকেদের সর্বোত্তম বিষয়টাকে উপেক্ষা ও পদতলে দলিত করা হয়েছে। ইস্রায়েল দীর্ঘসময় ধরে এক লড়াইয়ে অর্থাৎ বিশুদ্ধ ও মিথ্যা ধর্মের মধ্যে এবং যিহোবা ঈশ্বরের উপাসনা ও আশেপাশের জাতিগুলোর প্রতিমাপূজার মধ্যে এক যুদ্ধে রত ছিল। এলিয়ের দিনে, সেই লড়াই বিশেষ করে আরও জঘন্য পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।

রাজা আহাব সীদোনের রাজার মেয়ে ঈষেবলকে বিয়ে করেছিলেন। ঈষেবল ইস্রায়েলের মধ্যে বাল উপাসনার বিস্তার ঘটাতে এবং যিহোবার উপাসনাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। শীঘ্রই আহাব তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বালের জন্য একটা মন্দির ও যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন আর সেই পৌত্তলিক দেবতার কাছে প্রণিপাত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি যিহোবাকে প্রচণ্ডভাবে অসন্তুষ্ট করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৬:৩০-৩৩. *

কোন বিষয়টা বাল উপাসনাকে এতটা ঘৃণ্য করে তুলেছিল? এটা ইস্রায়েলকে প্রলুব্ধ করেছিল, অনেককে সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে প্ররোচিত করেছিল। এ ছাড়া, এটা এক জঘন্য এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির ধর্ম ছিল। মন্দিরে পুরুষ ও নারীদের বেশ্যাবৃত্তি, যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা আর এমনকি সন্তানদের বলিদান করাও এই ধর্মের উপাসনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে যিহোবা এলিয়কে একটা খরার বিষয়ে ঘোষণা করার জন্য আহাবের কাছে পাঠিয়েছিলেন, যে-খরা ততদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত না ঈশ্বরের ভাববাদী প্রকাশ্যে সেটার শেষ সম্বন্ধে জানান। (১ রাজাবলি ১৭:১) এলিয় আহাবের সঙ্গে আবারও দেখা করার এবং তাকে বালের ভাববাদী ও লোকেদেরকে কর্মিল পর্বতে একত্রিত করতে বলার আগে বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছিল।

তাহলে, বর্তমানে এই লড়াই আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে? কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, বাল উপাসনার কাহিনি এখন অপ্রাসঙ্গিক কারণ আমাদের চারপাশে বালের কোনো মন্দির বা যজ্ঞবেদি নেই। কিন্তু, এই বিবরণ শুধুমাত্র এক প্রাচীন ইতিহাস নয়। (রোমীয় ১৫:৪) “বাল” শব্দটির অর্থ হল “কর্তা” বা “প্রভু।” যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে বলেছিলেন যে, তাদের উচিত তাঁকে তাদের “বাল” অর্থাৎ পতি বা স্বামীতুল্য কর্তা হিসেবে বেছে নেওয়া। (যিশাইয় ৫৪:৫) আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, লোকেরা এখনও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ছাড়াও অন্যান্য প্রভুর সেবা করে থাকে? প্রকৃতপক্ষে, লোকেরা টাকাপয়সা, কেরিয়ার, আমোদপ্রমোদ, যৌন অভিলাস অথবা যিহোবা ছাড়া অগণিত দেব-দেবীর মধ্যে যেকারোরই উপাসনা করার পিছনে তাদের জীবনকে নিয়োজিত করুক না কেন, তারা একজন প্রভুকে বেছে নিচ্ছে। (মথি ৬:২৪; রোমীয় ৬:১৬) তাই এক অর্থে, বাল উপাসনার সবচেয়ে জোরালো বৈশিষ্ট্যগুলো আজও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যিহোবা এবং বালের মধ্যে ঘটা সেই প্রাচীন প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা, আমরা কার সেবা করব সেই বিষয়ে বিজ্ঞতার সঙ্গে বেছে নিতে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে।

“পা দিয়া” হাঁটা—কীভাবে?

কর্মিল পর্বতের ঝোড়ো বাতাসপূর্ণ চূড়া এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে সমগ্র ইস্রায়েলের বিশাল অংশ—কীশোন নদীর উপত্যকা থেকে কাছের মহাসমুদ্র (ভূমধ্যসাগর) এবং সুদূর উত্তরাঞ্চলের লিবানোন পর্বত পর্যন্ত—দেখা যায়। * কিন্তু সেই চূড়ান্ত দিনে যখন সূর্যোদয় হয়েছিল, তখন সেই দেশটা এক সাংঘাতিক অবস্থার মধ্যে ছিল। এক সময়ের উর্বরদেশ, যেটা যিহোবা অব্রাহামের সন্তানদের দিয়েছিলেন, সেটার ওপর মৃত্যুর ছায়া ঘিরে ছিল। এটা তখন এমন এক দেশ, যেটার ভূমি প্রখর সূর্যের তাপে শুষ্ক হয়ে গিয়েছে, ঈশ্বরের নিজের লোকেদের মূর্খতার ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে! সেই লোকেরা যখন একত্রিত হয়েছিল, তখন এলিয় তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন: “তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে? সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাহার অনুগামী হও।”—১ রাজাবলি ১৮:২১.

‘দুই নৌকায় পা দিয়া থাকা’ অভিব্যক্তিটির দ্বারা এলিয় কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? আসলে, সেই লোকেরা বুঝতে পারেনি যে, তাদেরকে যিহোবা ও বালের উপাসনার মধ্যে থেকে বাছাই করতে হবে। তারা ভেবেছিল যে, তারা দুজনকেই উপাসনা করতে পারে—তাদের ঘৃণ্য ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান দ্বারা বালকে সন্তুষ্ট করতে পারে আর একইসঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরের অনুগ্রহও চাইতে পারে। সম্ভবত তারা যুক্তি করেছিল যে, বাল তাদের শস্য এবং পশুপালকে আশীর্বাদ করবে আর “বাহিনীগণের সদাপ্রভু” যুদ্ধের সময়ে তাদের সুরক্ষা করবেন। (১ শমূয়েল ১৭:৪৫) তারা একটা মৌলিক সত্য ভুলে গিয়েছিল, যা আজকেও অনেকে বুঝতে পারে না আর তা হল, যিহোবার কারো সঙ্গে তাঁর উপাসনাকে ভাগ করে নেন না। তিনি স্বগৌরব বা একাগ্র ভক্তি চান এবং তিনি তা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর উপাসনার সঙ্গে যদি অন্য কোনো ধরনের উপাসনাকে মিশ্রিত করা হয়, তাহলে সেটা তাঁর কাছে অগ্রহনযোগ্যই নয়, এমনকি ঘৃণ্যও!—যাত্রাপুস্তক ২০:৫.

সুতরাং, সেই ইস্রায়েলীয়রা এমন একজন ব্যক্তির মতো ছিল, যিনি একই সময়ে দুটো পথে “পা দিয়া” হাঁটার চেষ্টা করছেন। ঈশ্বরের উপাসনাকে দূরে সরিয়ে রেখে ‘বালদেবগণকে’ ধীরে ধীরে তাদের জীবনের অংশ হতে দিয়ে আজকেও অনেক লোক একই ধরনের ভুল করে থাকে! দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকা থেকে বিরত হওয়ার জন্য এলিয়ের জোরালো ও উদ্দীপনামূলক আহ্বান আমাদেরকে নিজেদের অগ্রাধিকারের বিষয় এবং উপাসনাকে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

এক চূড়ান্ত পরীক্ষা

এরপর এলিয় একটা পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এটা ছিল খুবই সাধারণ একটা পরীক্ষা। বালের যাজকদের একটা যজ্ঞবেদি স্থাপন করতে হবে আর সেটার ওপর একটা বলি রাখতে হবে; তারপর তাদেরকে এটাতে আগুন জ্বালানোর জন্য তাদের দেবতার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। এলিয়ও একই কাজ করবেন। তিনি বলেছিলেন: “যে ঈশ্বর আগুনের দ্বারা উত্তর দিবেন, তিনিই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW] হউন।” এলিয় ভালভাবেই জানতেন যে, কে সত্য ঈশ্বর ছিলেন। তার বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় ছিল যে, তিনি বালের ভাববাদীদের প্রথমে প্রার্থনা করতে দিতে ইতস্তত করেননি। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমস্ত সুযোগসুবিধা দিয়েছিলেন, তাদেরকে বলির জন্য প্রথমে ষাঁড় বেছে নিতে ও বালের কাছে প্রার্থনা করতে সুযোগ দিয়েছিলেন। *১ রাজাবলি ১৮:২৪, ২৫.

আমরা অলৌকিক কাজগুলোর যুগে বাস করছি না। কিন্তু, যিহোবার পরিবর্তন হয়নি। তাই, আমরা হয়তো এলিয়ের মতোই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অন্যেরা যখন বাইবেল যা শিক্ষা দেয় সেই সম্বন্ধে দ্বিমত পোষণ করে, তখন আমরা তাদেরকে তাদের কথা প্রথমে প্রকাশ করতে দিতে ভয় পাব না। এলিয়ের মতো আমরাও হয়তো বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য সত্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে পারি। আমরা নিজেদের ওপর নয় বরং তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য, যেটি ‘সংশোধনের নিমিত্ত’ লেখা হয়েছে, সেটির ওপর নির্ভর করার দ্বারা তা করে থাকি।—২ তীমথিয় ৩:১৬.

বালের যাজকরা তাদের বলি স্থাপন করতে এবং তাদের দেবতাকে ডাকতে শুরু করেছিল। “হে বাল, আমাদিগকে উত্তর দেও” তারা বার বার চিৎকার করে বলতে থাকে। তারা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তা করে চলেছিল। “কিন্তু কোন বাণী হইল না, এবং কেহই উত্তর দিল না,” বাইবেল বলে। দুপুর হলে এলিয় তাদেরকে বিদ্রূপ করতে শুরু করেছিলেন, ব্যঙ্গ্য করে বলেছিলেন যে, বালের নিশ্চয়ই তাদেরকে উত্তর দেওয়ার সময় নেই, সে কোথাও গিয়েছে বা পথে চলছে কিংবা সে ঘুমাচ্ছে আর তাকে জাগানোর জন্য কাউকে প্রয়োজন। “উচ্চৈঃস্বরে ডাক,” এলিয় সেই প্রতারকদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, তিনি এই বাল উপাসনাকে এক হাস্যকর প্রতারণা হিসেবে দেখেছিলেন আর তিনি চেয়েছিলেন যেন ঈশ্বরের লোকেরাও বুঝতে পারে যে, এটা আসলেই প্রতারণাপূর্ণ।—১ রাজাবলি ১৮:২৬, ২৭.

এর প্রতি সাড়া দিয়ে, বালের যাজকরা এমনকি আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল, “তাহারা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, এবং আপনাদের ব্যবহারানুসারে গাত্রে রক্তের ধারা বহন পর্য্যন্ত ছুরিকা ও শলাকা দ্বারা আপনাদিগকে ক্ষতবিক্ষত করিল।” কিন্তু, কোনোই লাভ হয়নি! “কোন বাণীও হইল না, কেহ উত্তরও দিল না, কেহ মনোযোগও করিল না।” (১ রাজাবলি ১৮:২৮, ২৯) আসলে বাল বলে কেউ ছিলই না। যিহোবার কাছ থেকে লোকদেরকে প্রলুব্ধ করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে ছিল শয়তানের পরিকল্পিত এক উদ্ভাবন। অতীতের মতো আজকেও, যিহোবা ছাড়া অন্য কোনো প্রভুকে বেছে নেওয়া হতাশার দিকে, এমনকি লজ্জিত হওয়ার দিকে পরিচালিত করে।—গীতসংহিতা ২৫:৩; ১১৫:৪-৮.

উত্তর

বিকেলে এলিয়ের পালা এসেছিল। তিনি যিহোবার জন্য একটা ভাঙা যজ্ঞবদি মেরামত করেছিলেন, যেটাকে নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ উপাসনার শত্রুরা ভেঙে ফেলেছিল। তিনি ১২টা পাথর ব্যবহার করেছিলেন, যা সম্ভবত ইস্রায়েলের ১০ বংশের অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, তখনও পর্যন্ত তারা ১২ বংশের সকলকে দেওয়া ব্যবস্থার অধীনে ছিল। তারপর তিনি তার বলি রেখেছিলেন এবং সমস্তকিছুর ওপর জল ঢেলে দিয়েছিলেন, যা সম্ভবত নিকটবর্তী ভূমধ্যসাগর থেকে আনা হয়েছিল। এমনকি তিনি যজ্ঞবেদির চারপাশে একটা প্রণালী খনন করে সেটাও জলে পূর্ণ করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি তার এতটাই আস্থা ছিল যে, তিনি যেখানে কিনা বালের ভাববাদীদের সমস্ত ধরনের সুযোগসুবিধা দিয়েছিলেন, সেখানে যিহোবার ক্ষেত্রে সমস্ত ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৮:৩০-৩৫.

সমস্তকিছু প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর এলিয় প্রার্থনা করেছিলেন। প্রার্থনার সহজসরল ভাষা স্পষ্টতই দেখিয়েছিল যে, কোনটা এলিয়ের জন্য অগ্রাধিকারের বিষয়। সবচেয়ে প্রথমে, তিনি এটা জানাতে চেয়েছিলেন যে, বাল নয় বরং যিহোবাই ছিলেন ‘ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বর।’ দ্বিতীয়ত, তিনি সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, তার নিজের ভূমিকা হল তিনি যিহোবার দাস; সমস্ত গৌরব এবং কৃতিত্ব ঈশ্বরকে দেওয়া উচিত। সবশেষে, তিনি দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তখনও তার লোকেদের জন্য চিন্তা করতেন কারণ তিনি যিহোবা ‘ইহাদের হৃদয় ফিরাইয়া আনিয়াছেন’ এটা দেখতে উৎসুক ছিলেন। (১ রাজাবলি ১৮:৩৬, ৩৭) তারা অবিশ্বস্ত হওয়ার দ্বারা সমস্ত ধরনের দুর্দশা নিয়ে আসা সত্ত্বেও এলিয় তাদেরকে ভালবাসতেন। ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের প্রার্থনায় আমরাও কি ঈশ্বরের নামের জন্য একই ধরনের চিন্তা আর সেইসঙ্গে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য নম্রতা ও সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি?

এলিয় প্রার্থনা করার আগে, সেখানে উপস্থিত জনতা হয়তো ভেবেছিল যে, বালের মতো যিহোবাও মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হবেন কি না। তবে, প্রার্থনা করার পর ভাবনাচিন্তা করার মতো কোনো সময় ছিল না। বিবরণ বলে: “তখন সদাপ্রভুর অগ্নি পতিত হইল, এবং হোমবলি, কাষ্ঠ, প্রস্তর ও ধূলি গ্রাস করিল, এবং প্রণালীস্থীত জলও চাটিয়া খাইল।” (১ রাজাবলি ১৮:৩৮) কী চমৎকার এক উত্তর! আর লোকেরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?

“সদাপ্রভুই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW], সদাপ্রভুই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW]” তারা সকলে চিৎকার করে বলেছিল। (১ রাজাবলি ১৮:৩৯) শেষপর্যন্ত, তারা সত্যটা বুঝতে পেরেছিল। তা সত্ত্বেও, তখনও পর্যন্ত তারা কোনো বিশ্বাস দেখায়নি। সত্যি বলতে কী, একটা প্রার্থনার উত্তরে আকাশ থেকে আগুন পড়তে দেখার পর যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করা, বিশ্বাসের কোনো হৃদয়গ্রাহী প্রকাশ নয়। তাই, এলিয় তাদেরকে আরও কিছু করতে বলেছিলেন। তিনি তাদেরকে সেই কাজটা করতে বলেছিলেন, যা বহু বছর আগেই তাদের করা উচিত ছিল—যিহোবার ব্যবস্থা পালন করা। ঈশ্বরের ব্যবস্থা বলেছিল যে, মিথ্যা ভাববাদী এবং প্রতিমাপূজকদের প্রাণদণ্ড দিতে হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:৫-৯) বালের এই যাজকরা ছিল যিহোবা ঈশ্বরের শত্রু, যারা জেনেশুনে তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর বিপরীতে কাজ করেছিল। তারা কি করুণা লাভের যোগ্য ছিল? বালের উদ্দেশে বলি হিসেবে যে-নির্দোষ সন্তানদের জীবন্ত পোড়ানো হয়েছিল, তাদের প্রতি কি কোনো করুণা দেখানো হয়েছিল? (হিতোপদেশ ২১:১৩; যিরমিয় ১৯:৫) না, এই লোকেরা একেবারেই করুণা লাভের যোগ্য ছিল না। তাই এলিয় তাদেরকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন আর সত্যি সত্যিই তাদের হত্যা করা হয়েছিল।—১ রাজাবলি ১৮:৪০.

আধুনিক কিছু সমালোচক কর্মিল পর্বতের এই পরীক্ষার শেষ পরিণতির সমালোচনা করেন। কেউ কেউ হয়তো এই ভেবে ভয় পায় যে, পাছে ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা ধর্মীয় কুসংস্কারের দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজগুলোর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার জন্য এই ঘটনাকে ব্যবহার করবে। আর দুঃখের বিষয় হল যে, বর্তমানে অনেক দৌরাত্ম্যপরায়ণ ধর্মীয় গোঁড়া লোক রয়েছে। কিন্তু, এলিয় গোঁড়া ছিলেন না। তিনি যিহোবার পক্ষে ন্যায়সংগত বিচার সম্পাদন করছিলেন। অধিকন্তু, প্রকৃত খ্রিস্টানরা জানে যে, তারা এলিয়ের পথাবলম্বন করে দুষ্টদেরকে হত্যা করতে পারে না। মশীহ আসার পর, পিতরের উদ্দেশে বলা খ্রিস্টের এই কথাগুলোর মধ্যে যিশুর সমস্ত শিষ্যের জন্য মানদণ্ড রয়েছে: “তোমার খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।” (মথি ২৬:৫২) যিহোবা ভবিষ্যতে ঐশিক ন্যায়বিচার কার্যকর করার জন্য তাঁর পুত্রকে ব্যবহার করবেন।

একজন সত্য খ্রিস্টানের দায়িত্ব হল বিশ্বাস সহকারে জীবনযাপন করা। (যোহন ৩:১৬) তা করার একটা উপায় হল এলিয়ের মতো বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরকে অনুকরণ করা। তিনি একমাত্র যিহোবাকেই উপাসনা করতেন এবং অন্যদেরকেও একই কাজ করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি সাহসের সঙ্গে এক প্রতারণাপূর্ণ ধর্মের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন, যেটাকে শয়তান যিহোবার কাছ থেকে লোকেদেরকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিল। আর বিষয়গুলোর মীমাংসা করার জন্য তিনি নিজের ক্ষমতা ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, এলিয় বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন। আমরা প্রত্যেকে যেন তার বিশ্বাস অনুকরণ করি! (w০৮ ১/১)

[পাদটীকাগুলো]

^ আহাবের সঙ্গে এলিয়ের পূর্ববর্তী আচরণ সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার “আপনার কি এলিয়ের মতো বিশ্বাস রয়েছে?” শিরোনামের প্রবন্ধটি দেখুন।

^ কর্মিল পর্বতে সাধারণত ঘন অরণ্য রয়েছে কারণ সাগরের আর্দ্র বায়ু এর ঢালে উঠে যায় আর এর ফলে প্রায়ই প্রচুর বৃষ্টি ও শিশিরপাত হয়। যেহেতু বালকে বৃষ্টি নিয়ে আসার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হতো, তাই স্পষ্টতই এই পর্বত বাল উপাসনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। এই কারণে অনুর্বর, শুষ্ক কর্মিল পর্বত বাল উপাসনার প্রতারণা উন্মোচন করে দেওয়ার জন্য এক উপযুক্ত স্থান ছিল।

^ লক্ষণীয় বিষয়টা হল, এলিয় তাদেরকে বলেছিলেন: বলিতে “আগুন দিও না।” কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি বলে যে, কখনো কখনো এই ধরনের প্রতিমাপূজকরা নীচে গোপন ছিদ্র রয়েছে এমন যজ্ঞবেদিগুলো ব্যবহার করত, যাতে আগুন অলৌকিকভাবে জ্বলেছে বলে মনে হয়।

[২০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিহোবা ছাড়া অন্য কোনো প্রভুকে বেছে নেওয়া হতাশার দিকে পরিচালিত করে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

“সদাপ্রভুই সত্য ঈশ্বর”