সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কি ঈশ্বরের কাছ থেকে শাস্তিস্বরূপ?

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কি ঈশ্বরের কাছ থেকে শাস্তিস্বরূপ?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কি ঈশ্বরের কাছ থেকে শাস্তিস্বরূপ?

 ঈশ্বর নির্দোষ লোকেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ব্যবহার করেন না। তিনি কখনো তা করেননি এবং কখনো করবেনও না। কেন? কারণ “ঈশ্বর প্রেম,” ১ যোহন ৪:৮ পদে বাইবেল বলে।

প্রেম হল ঈশ্বরের সমস্ত কাজের উৎস। প্রেম নির্দোষ ব্যক্তিদের ক্ষতি করে না কারণ বাইবেল বলে যে, “প্রেম প্রতিবাসীর অনিষ্ট সাধন করে না।” (রোমীয় ১৩:১০) ইয়োব ৩৪:১২ পদে বাইবেল বলে: “ঈশ্বর ত কখনও দুষ্টাচরণ করেন না।”

এটা ঠিক যে, বাইবেল আমাদের দিনে বিভিন্ন দুর্যোগ যেমন, “মহৎ মহৎ ভূমিকম্প” ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। (লূক ২১:১১) কিন্তু যিহোবা সেগুলোর কারণে ঘটা ক্ষতির জন্য কোনোভাবেই দায়ী নন, ঠিক যেমন একজন আবহাওয়াবিদ যিনি কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেন, তিনি এর দ্বারা সাধিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী নন। তাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ঘটা মানুষের দুঃখকষ্টের জন্য যদি ঈশ্বর দায়ী না হয়ে থাকেন, তাহলে কে দায়ী?

“সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের “মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” বাইবেল প্রকাশ করে। (১ যোহন ৫:১৯) মানবজাতির শুরুতে তার বিদ্রোহের দিন থেকে আমাদের দিন পর্যন্ত সে এক নরঘাতক হিসেবেই রয়েছে। (যোহন ৮:৪৪) শয়তান মানুষের জীবনকে সস্তা ও নগণ্য হিসেবে দেখে থাকে। সে স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার দ্বারা পরিচালিত হয় আর তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সে বিশ্বজুড়ে এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা স্বার্থপরতাকে উসকে দেয়। আজকের জগৎ ব্যবস্থা মানুষের শোষণ করাকে এতটাই প্রশ্রয় দেয় যে, অনেক প্রতিরক্ষাহীন লোক এমন জায়গাগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বাস করে, যেখানে খুব সম্ভবত প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলো আঘাত হানতে পারে। (ইফিষীয় ২:২; ১ যোহন ২:১৬) তাই, কিছু বিপর্যয় যেগুলো শিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরা ভোগ করে থাকে, সেগুলোর জন্য অবশ্যই লোভী মানুষেরা দায়ী। (উপদেশক ৮:৯) কীভাবে?

অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো অনন্তপক্ষে কিছুটা হলেও মানবসৃষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, সেই দুঃখদুর্দশার কথা বিবেচনা করুন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিয়েন্স শহরের হারিকেনে ভেসে যাওয়া কিংবা ভেনিজুয়েলার উপকূলীয় পার্বত্যাঞ্চলের ভূমিধসের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির অধিবাসীদের ওপর এসে পড়েছিল। এগুলো ও অন্যান্য ঘটনায় প্রাকৃতিক শক্তি যেমন, বায়ু ও বৃষ্টি মূলত মানুষের পরিবেশ সংক্রান্ত অজ্ঞতার, নিম্নমানের প্রকৌশলবিদ্যার, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনার, সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করার এবং আমলাতান্ত্রিক অপারদর্শিতার কারণে ধ্বংসযজ্ঞের রূপ নিয়েছিল।

বাইবেলের সময়ের একটা দুর্যোগের কথা বিবেচনা করুন। যিশুর দিনে, হঠাৎ করে ভেঙে পড়া একটা উচ্চগৃহ ১৮ জন ব্যক্তির জীবন কেড়ে নিয়েছিল। (লূক ১৩:৪) এই দুর্যোগের কারণ ছিল হয়তো মানুষের ভুল, “কাল ও দৈব” কিংবা উভয়ই—কিন্তু নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের বিচার নয়।—উপদেশক ৯:১১.

ঈশ্বরের হস্তক্ষেপে কি কখনো কোনো দুর্যোগ ঘটেছিল? হ্যাঁ ঘটেছে, তবে প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বৈসাদৃশ্যে, সেগুলোতে কারা রক্ষা পাবে ও কারা ধ্বংস হবে তা যিহোবা বাছাই করেছিলেন, সেগুলোর পিছনে কোনো একটা উদ্দেশ্য ছিল আর সেগুলো খুবই বিরল ঘটনা ছিল। কুলপতি নোহের দিনে পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবন এবং লোটের দিনে সদোম ও ঘমোরার ধ্বংস হল এর দুটো উদাহরণ। (আদিপুস্তক ৬:৭-৯, ১৩; ১৮:২০-৩২; ১৯:২৪) সেই ঐশিক বিচারগুলো অনুতাপহীন দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করে দিয়েছিল কিন্তু যারা ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক ছিল, তাদের জীবন রক্ষা করেছিল।

বস্তুতপক্ষে, সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করে দেওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিণতি থেকে স্বস্তি নিয়ে আসার সামর্থ্য, আকাঙ্ক্ষা এবং ক্ষমতা যিহোবা ঈশ্বরের রয়েছে। ঈশ্বরের মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে গীতসংহিতা ৭২:১২ পদ এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “তিনি আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করিবেন।” (w০৮ ৫/১)