সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করা

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করা

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করা

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি দুটোরই বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একজন ব্যক্তি কী করতে পারেন? আসুন আমরা এমন কয়েকটা ব্যবহারিক পদক্ষেপের বিষয় পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো নেওয়া যেতে পারে।

দুর্দশা থেকে দূরে থাকুন। বাইবেল বলে, “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” (হিতোপদেশ ২২:৩) এটা হল বিজ্ঞ পরামর্শ যা দুর্যোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। আসন্ন অগ্ন্যুৎপাত, বন্যার সম্ভাবনা অথবা দ্রুত এগিয়ে আসা হারিকেন অথবা প্রবল ঘূর্ণিঝড় সম্বন্ধে যদি কোনো সাবধানবাণী দেওয়া হয়, তাহলে সেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়া বিজ্ঞতার কাজ হবে। বাড়ি অথবা অন্যান্য বস্তুগত জিনিসের চেয়ে জীবন আরও বেশি মূল্যবান।

কিছু জনের কাছে, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটা এলাকায় বাস না করা বেছে নেওয়া হয়তো সম্ভব। একটা বিশেষ সূত্র জানায়: “ভৌগলিকভাবে নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোতে দুর্যোগের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। পৃথিবীর খুব সামান্য অংশেই বেশিরভাগ এই ঝুঁকি থাকে এবং ভবিষ্যতে বেশিরভাগ বড়ো মাপের দুর্যোগগুলো এই অঞ্চলগুলোতেই ঘটবে।” উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্র উপকূলবর্তী নিচু অঞ্চলগুলো অথবা পৃথিবীর চ্যুতিরেখার কাছাকাছি অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে তা সত্য হতে পারে। আপনি যদি অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল এলাকাগুলোতে বাস করা এড়িয়ে চলতে অথবা নিরাপদ কোনো স্থানে চলে যেতে পারেন, তাহলে আপনি হয়তো দুর্যোগের ফলে কষ্টভোগ করার ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করতে পারবেন।

কী করবেন তা পরিকল্পনা করে রাখুন। সমস্ত রকম সাবধানতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও, আপনি হয়তো অপ্রত্যাশিত কোনো দুর্যোগের শিকার হতে পারেন। আপনি যদি আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখেন, তাহলে এর সঙ্গে মোকাবিলা করা আরও সহজ হবে। এ ছাড়া, এটা আগে উদ্ধৃত হিতোপদেশ ২২:৩ পদে পাওয়া উপদেশের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আপনি কি আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ব্যাগ প্রস্তুত করে রেখেছেন ও যাওয়ার জন্য তৈরি আছেন? ওয়ান-টু-থ্রি অভ্‌ ডিজাস্টার এডুকেশন নামক প্রকাশনাটি নীচের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে: প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, জলের বোতল, পচনশীল নয় এমন খাবারদাবার এবং দরকারি কাগজপত্র। এ ছাড়া, কোন ধরনের দুর্যোগগুলো ঘটতে পারে আর প্রতিটা ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে, সেটা নিয়ে আপনার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করাও বিজ্ঞতার কাজ হবে।

ঈশ্বরের সঙ্গেএক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখুন। এটা যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে। বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে বলে যে, “তিনিই করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন।” আরেকটি পদ তাঁকে এমন একজন ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করে “যিনি অবনতদিগকে সান্ত্বনা করেন।”—২ করিন্থীয় ১:৩, ৪; ৭:৬.

হ্যাঁ, যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখে, তাদের প্রতি যা যা ঘটে, সেই বিষয়ে তিনি ভালোভাবেই জানেন। তিনি হলেন প্রেমের ঈশ্বর এবং তিনি বিভিন্ন উপায়ে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন, যা সতেজ করে। (১ যোহন ৪:৮) অলৌকিক কাজের জন্য নয় কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিশালী পবিত্র আত্মার জন্য করা প্রার্থনা যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহায্য জোগাতে পারে। পবিত্র আত্মা বাইবেলের সেই পদগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, যেগুলো যারা দুর্দশাগুলো ভোগ করছে তাদের জন্য সান্ত্বনাদায়ক এবং লাঘবকারী হতে পারে। সত্যই, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা প্রাচীন ইস্রায়েলের একজন রাজা, দায়ূদের মতো অনুভব করতে পারে, যিনি বলেছিলেন: “যখন আমি মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকা দিয়া গমন করিব, তখনও অমঙ্গলের ভয় করিব না, কেননা তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ, তোমার পাঁচনী ও তোমার যষ্টি আমাকে সান্ত্বনা করে।”—গীতসংহিতা ২৩:৪.

সহখ্রিস্টানরা একে অপরকে সাহায্য করে। প্রথম শতাব্দীতে, আগাব নামে একজন খ্রিস্টান ভাববাদী জানিয়েছিলেন যে, “সমুদয় পৃথিবীতে মহাদুর্ভিক্ষ হইবে; তাহা ক্লৌদিয়ের অধিকার সময়ে ঘটিল।” দুর্ভিক্ষ যিহূদায় যিশুর অনেক শিষ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল। অন্যান্য জায়গার শিষ্যরা যখন তাদের সহখ্রিস্টানদের সেই দুঃখজনক পরিস্থিতির কথা শুনেছিল, তখন তারা কী করেছিল? বিবরণ জানায়: “শিষ্যেরা প্রতিজন স্ব স্ব সঙ্গতি অনুসারে যিহূদিয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণের পরিচর্য্যার জন্য তাঁহাদের কাছে সাহায্য পাঠাইতে স্থির করিলেন।” (প্রেরিত ১১:২৮, ২৯) ত্রাণসামগ্রী জোগানোর দ্বারা তারা প্রেমের সঙ্গে সাড়া দিয়েছিল।

আজকের দিনে যখন মারাত্মক দুর্দশাগুলো ঘটে, তখন ঈশ্বরের দাসেরা একইভাবে সাড়া দিয়ে থাকে। যিহোবার সাক্ষিরা সহবিশ্বাসীদের সাহায্য করার ব্যাপারে সুপরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে যখন এক প্রবল ভূমিকম্প চিলিতে আঘাত হেনেছিল, তখন ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সাহায্য করার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা সঙ্গেসঙ্গে সাড়া দিয়েছিল। কার্লা, যার বাড়ি সুনামিতে ভেসে গিয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “এটা দেখা সান্ত্বনাদায়ক ও উৎসাহজনক ছিল যে, আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য ঠিক পরের দিনই [সহসাক্ষিরা] অন্যান্য এলাকা থেকে সেখানে পৌঁছেছিল। নিঃসন্দেহে, যিহোবা সেই স্বেচ্ছাসেবকদের দেখানো উদারতার মাধ্যমে আমাদেরকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। আমি ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম ও সুরক্ষিত বলে মনে করেছিলাম।” তার দাদু, যিনি সাক্ষি নন, তিনি যে-সাহায্য প্রদান করা হয়েছিল, তা লক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “বছরের পর বছর ধরে আমি আমার গির্জায় যা দেখেছি এটা তার থেকে একেবারে আলাদা।” তিনি যা দেখেছিলেন সেটা তাকে তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদেরকে জিজ্ঞেস করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা দুর্দশার সময়ে অনেক সাহায্যকারী হতে পারে। কিন্তু তারপরও, এমন সময় কি কখনো আসবে যখন পৃথিবী দুর্যোগ থেকে অভিশাপ মুক্ত হবে? আসুন আমরা দেখি এই বিষয়ে বাইবেল কী বলে। (w১১-E ১২/০১)

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি আপৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ব্যাগ প্রস্তুত করে রেখেছেন ও যাওয়ার জন্য তৈরি আছেন?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

অলৌকিক কাজের জন্য নয় কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিশালী পবিত্র আত্মার জন্য করা প্রার্থনা যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহায্য জোগাতে পারে

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

সহখ্রিস্টানরা দুর্যোগের প্রভাবগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একে অপরকে সাহায্য করে

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমি ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম ও সুরক্ষিত বলে মনে করেছিলাম”