সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

 প্রচ্ছদ বিষয় | ধূমপান সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি

পৃথিবীজুড়ে এক মহামারী

পৃথিবীজুড়ে এক মহামারী

ধূমপান এক অপ্রতিরোধ্য ঘাতক।

  • এটা বিগত শতাব্দীতে ১০,০০,০০,০০০ ব্যক্তির জীবন কেড়ে নিয়েছে।

  • এটা প্রতি বছর প্রায় ৬০,০০,০০০ ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেয়।

  • এর ফলে, গড়ে প্রতি ছয় সেকেন্ডে এক জন ব্যক্তি প্রাণ হারায়।

আর মৃত্যুর এই হার কমার কোনো আশাই নেই।

আধিকারিকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে ২০৩০ সাল নাগাদ ধূমপানের কারণে বছরে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮০,০০,০০০ ছাড়িয়ে যাবে। তারা অনুমান করছে যে, একবিংশ শতাব্দীর শেষে ধূমপানের কারণে ১০০,০০,০০,০০০ ব্যক্তি জীবন হারাবে।

শুধুমাত্র ধূমপায়ী ব্যক্তিরাই যে ধূমপানের শিকার হয়, তা কিন্তু নয়। এর মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, যারা আবেগগত ও অর্থনৈতিক সমস্যা ভোগ করে। এ ছাড়া, সেই ৬,০০,০০০ ব্যক্তিও এর অন্তর্ভূক্ত যারা নিজেরা ধূমপান করে না অথচ প্রশ্বাসের সঙ্গে সেই ধোঁযা নিতে বাধ্য হয়। চিকিৎসার খরচ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্রত্যেককে এই ধূমপানের বোঝা বইতে হচ্ছে।

অন্যান্য মহামারীর ওষুধ বের করার জন্য ডাক্তারদের যেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়, সেখানে এই মহামারীর ক্ষেত্রে আরোগ্যলাভ করা সম্ভব আর এর সমাধান সকলেরই জানা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র ডিরেক্টর জেনারেল ডা. মার্গারেট চ্যানের কথা অনুযায়ী: “তামাকজাত দ্রব্যের প্রকোপে যে-মহামারী সৃষ্টি হয়েছে, তা মানুষের নিজের তৈরি আর সরকার ও সমাজের মিলিত প্রচেষ্টায় এর থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।”

এই সমস্যার সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অনেক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আর তা খুবই উল্লেখযোগ্য। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে প্রায় ১৭৫টা দেশ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছিল। * কিন্তু, ক্ষমতাবান শক্তিগুলো এই মহামারীকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রত্যেক বছর তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদকারী কোম্পানিগুলো নতুন গ্রাহকদের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসবাসরত মহিলা ও যুবক-যুবতীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিজ্ঞাপন খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। তামাকের মধ্যে লোককে আসক্ত করার যে-ক্ষমতা রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করে যে, যারা ইতিমধ্যে ধূমপান করছে এমন ১০০ কোটি ব্যক্তির ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই ব্যক্তিরা যদি তাদের ধূমপান বন্ধ না করে, তাহলে আগামী ৪০ বছরে মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন এবং আসক্তি অনেককে এমন এক অভ্যাসের জালে আটকে রেখেছে, যে-জাল কেটে তারা বেরিয়ে আসতে চায়। নাওকো নামে একজন মহিলার এমনই এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি কিশোর বয়সেই ধূমপান করতে শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ধূমপানকে যেভাবে তুলে ধরা হয়, সেটাকে অনুকরণ করে তিনি নিজেকে খুব আধুনিক বলে মনে করতেন। যদিও তিনি তার বাবা ও মা দু-জনকেই ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যেতে দেখেছিলেন, তবুও তিনি ধূমপান ছাড়েননি। আর এমনকী তার দুই মেয়েকে বড়ো করে তোলার সময়েও তিনি তার এই অভ্যাস চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন: ‘আমার ভয় লাগতো যে আমারও না ফুসফুসে ক্যান্সার হয় আর আমি আমার সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়েও দুশ্চিন্তা করতাম। কিন্তু, আমি আমার নেশা ছাড়তে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম যে, আমি কখনোই ধূমপান ছাড়তে পারব না।’

নাওকো শেষপর্যন্ত তার নেশা ছাড়তে পেরেছিলেন। তিনি তার ধূমপানের নেশা ছাড়ার জন্য সেই একই উৎস থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন, যা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে তামাকের আসক্তি থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছে। সেই উৎসটা কী? দয়া করে পরবর্তী প্রবন্ধটি পড়ে দেখুন। (w১৪-E ০৬/০১)

^ অনু. 11 এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দেওয়া, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রির ওপর সীমা আরোপ করা, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর আরও বেশি কর বসানো এবং ধূমপান ছাড়ানোর জন্য লোকেদের সাহায্য করতে বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা।