সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঐশিক বিচারগুলো—সেগুলো কি নিষ্ঠুর ছিল?

ঐশিক বিচারগুলো—সেগুলো কি নিষ্ঠুর ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য, আসুন আমরা বাইবেলে ঐশিক বিচার সম্বন্ধীয় দুটো উদাহরণের—নোহের দিনের জলপ্লাবন ও কনানীয়দের পুরোপুরি ধ্বংসের—ওপর একটু মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি।

নোহের দিনের জলপ্লাবন

আপনি হয়তো যা শুনে থাকেন: “ঈশ্বর যখন নোহ ও তার পরিবার ছাড়া, সমস্ত মানবজাতিকে জলপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন, তখন তা দেখিয়েছিল যে, তিনি নিষ্ঠুর।”

বাইবেল যা বলে: ঈশ্বর বলেছিলেন: “দুষ্ট লোকের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্ট লোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, [ইহাতেই আমার সন্তোষ]।” (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) তাই নোহের দিনে দুষ্ট লোকদেরকে ধ্বংস করা ঈশ্বরের জন্য কোনো আনন্দই নিয়ে আসেনি। তাহলে কেন তিনি তা করেছিলেন?

বাইবেল জানায় যে, ঈশ্বর যখন অতীতে ভক্তিহীন লোকেদের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিচার নিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি “যাহারা ভক্তিবিরুদ্ধ আচরণ করিবে, তাহাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ” ছিলেন। (২ পিতর ২:৫, ৬) ঈশ্বর কোন দৃষ্টান্ত বা নমুনা স্থাপন করেছিলেন?

প্রথমত, ঈশ্বর দেখিয়েছিলেন যে, এমনকী লোকেদেরকে ধ্বংস করা যদিও তাঁকে কষ্ট দেয়, তবুও তিনি সেই নিষ্ঠুর লোকেদেরকে লক্ষ করেন যারা দুঃখকষ্ট ঘটায় আর তাদের কাজের জন্য তাদেরকে তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একসময়ে, তিনি সমস্ত অবিচার ও দুঃখকষ্টের শেষ নিয়ে আসবেন।

দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের অতীতের বিচারকাজগুলোর নমুনা দেখায় যে, বিচার নিয়ে আসার আগে, ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে লোকেদেরকে সাবধান করেন। নোহ ছিলেন ধার্মিকতার প্রচারক কিন্তু অধিকাংশ লোকই তাকে অগ্রাহ্য করেছিল। বাইবেল বলে: ‘লোকেরা বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।’—মথি ২৪:৩৮, ৩৯.

ঈশ্বর কি তারপরেও সেই নমুনা অনুসরণ করেছেন? হ্যাঁ, করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দেরকে সাবধান করেছিলেন যে, তারা যদি তাদের চারপাশে থাকা জাতিগুলোর মতো দুষ্টতার দিকে ফেরে, তাহলে তিনি শত্রুদেরকে তাদের দেশ আক্রমণ করে তাদের রাজধানী যিরূশালেমকে ধ্বংস করতে ও তাদেরকে বন্দি করে নিয়ে যেতে অনুমতি দেবেন। ইস্রায়েলীয়রা দুষ্টতার দিকে ফিরেছিল—এমনকী শিশুবলি দেওয়ার অভ্যাস চালিয়ে গিয়েছিল। যিহোবা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? হ্যাঁ, নিয়েছিলেন তবে, খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে, তাঁর লোকেদেরকে তাদের পথ পরিবর্তন করার জন্য বার বার সাবধান করতে ভাববাদীদের পাঠানোর পরই। এমনকী তিনি বলেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।”—আমোষ ৩:৭.

আপনি যেভাবে এতে জড়িত: যিহোবার অতীতের বিচারগুলোতে আমরা যে-নমুনা দেখি, তা আমাদেরকে আশা প্রদান করে। আমরা আস্থার সঙ্গে তাদের ওপর ঈশ্বরের বিচার নিয়ে আসার অপেক্ষায় থাকতে পারি, যারা নিষ্ঠুরভাবে দুঃখকষ্ট ঘটায়। বাইবেল বলে: “দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হইবে, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১) যে-বিচার মানবজাতিকে দুঃখকষ্ট থেকে স্বস্তি দেয়, সেই সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন? এটা কি নিষ্ঠুরতার কাজ নাকি করুণার কাজ?

কনানীয়দের পুরোপুরি ধ্বংস

আপনি হয়তো যা শুনে থাকেন: “আধুনিক দিনের গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করলে কনানীয়দের ধ্বংস ছিল এক নিষ্ঠুর অপরাধমূলক যুদ্ধ।”

বাইবেল যা বলে: “[ঈশ্বরের] সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) ঐশিক বিচারকাজকে মানুষের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কেন? কারণ মানুষের বৈসাদৃশ্যে, ঈশ্বর হৃদয় অর্থাৎ মানুষের ভিতরে কী আছে, তা পড়তে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর যখন সদোম ও ঘমোরা নামে দুটো নগরের বিচার করেছিলেন ও সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন, তখন বিশ্বস্ত ব্যক্তি অব্রাহাম ঈশ্বরের সেই সিদ্ধান্ত যে ন্যায্য ছিল, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি এটা কল্পনাই করতে পারেননি যে, তার ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর “দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিককেও সংহার” করবেন। ঈশ্বর ধৈর্যের সঙ্গে তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এমনকী সদোম নগরে যদি দশজনও ধার্মিক পাওয়া যায়, তাহলে তিনি তাদের ধার্মিকতার জন্য সেই নগরকে ধ্বংস করবেন না। (আদিপুস্তক ১৮:২০-৩৩) স্পষ্টতই, ঈশ্বর সেই লোকেদের হৃদয় অনুসন্ধান করেছিলেন ও তাদের মন্দতা যে কতটা চরমে পৌঁছেছে, তা লক্ষ করেছিলেন।—১ বংশাবলি ২৮:৯.

একইভাবে, ঈশ্বর কনানীয়দের বিচার করেছিলেন এবং ন্যায়সংগতভাবে তাদেরকে ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। কনানীয়রা তাদের নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত ছিল, যেটার অন্তর্ভুক্ত ছিল বলি হিসেবে সন্তানদের জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা। * (২ রাজাবলি ১৬:৩) কনানীয়রা জানত যে, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে সমস্ত দেশ অধিকার করার আদেশ দিয়েছিলেন। যারা সেই দেশে থেকে গিয়েছিল ও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কেবল ইস্রায়েলীয়দেরই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবারও বিরোধিতা করছিল, যিনি জোরালো প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর লোকেদের সঙ্গে ছিলেন।

এ ছাড়া, যে-কনানীয়রা দুষ্টতার পথ পরিত্যাগ করে যিহোবার উচ্চ নৈতিক মানগুলোকে গ্রহণ করেছিল, ঈশ্বর তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, কনানীয় রাহব বেশ্যা, তার পরিবারের সঙ্গে রক্ষা পেয়েছিলেন। এ ছাড়া, গিবিয়োনের কনানীয় নগরের অধিবাসীরা যখন করুণাভিক্ষা করেছিল, তখন তারা ও তাদের সমস্ত সন্তান রক্ষা পেয়েছিল।—যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:২৫; ৯:৩, ২৪-২৬.

আপনি যেভাবে এতে জড়িত: কনানীয়দের বিচার থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। “ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন” সম্বন্ধে যে-ভাববাণী করা হয়েছিল, আমরা দ্রুত সেই দিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। (২ পিতর ৩:৭) আমরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসি, তাহলে যারা তাঁর ন্যায়ের শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে পৃথিবী থেকে নির্মূল করার দ্বারা তিনি যখন মানুষের দুঃখকষ্ট দূর করবেন, তখন আমরা উপকার লাভ করব।

মহাপ্লাবন দ্বারা দুষ্ট লোকেদেরকে ধ্বংস করার আগে, ঈশ্বর নোহের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা ঘোষণা করেছিলেন

যিহোবা প্রেমের সাথে আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, বাবা-মারা যে-বাছাইগুলো করে, সেগুলো তাদের সন্তানদের ওপর প্রভাব ফেলে। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০) এই কথাগুলো কি একজন নিষ্ঠুর ঈশ্বরের নাকি এমন একজন ঈশ্বরের, যিনি লোকেদেরকে ভালোবাসেন ও চান তারা যেন সঠিক বিষয়টা বেছে নেয়? (w১৩-E ০৫/০১)

^ প্রত্নতত্ত্ববিদরা মাটি খুঁড়ে কিছু প্রমাণ পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, কনানীয়দের উপাসনায় শিশুবলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।