সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৫

ক্ষমা করুন এবং যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ পান!

ক্ষমা করুন এবং যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ পান!

“যিহোবা যেমন তোমাদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন, তেমনই তোমরাও ক্ষমা করো।”—কল. ৩:১৩.

গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

সারাংশ *

১. যারা প্রকৃত অনুতপ্ত হয়, তাদের যিহোবা কোন আশ্বাস দিয়েছেন?

 যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের আইন দিয়েছেন আর তিনি হলেন সবচেয়ে উত্তম বিচারক। (গীত. ১০০:৩; যিশা. ৩৩:২২) তাই, আমাদের ক্ষমা করার অধিকার তাঁর রয়েছে। এ ছাড়া, তিনি হলেন আমাদের পিতা এবং তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন। কোনো ভুল করে ফেলার পর, আমরা যখন প্রকৃত অনুতপ্ত হই, তখন যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। (গীত. ৮৬:৫) তিনি ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে আমাদের এই বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি লিখিয়েছিলেন: “তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে।”—যিশা. ১:১৮.

২. অন্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

আমরা অসিদ্ধ, তাই কখনো কখনো আমরা একে অন্যকে দুঃখ দিয়ে থাকি। (যাকোব ৩:২) আমাদের মধ্যে যদি কোনো মতপার্থক্য দেখা দেয়, তা হলে একে অন্যকে ক্ষমা করা উচিত। এর ফলে, সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে। (হিতো. ১৭:৯; ১৯:১১; মথি ১৮:২১, ২২) যিহোবাও চান, আমরা যেন একে অন্যকে ক্ষমা করে দিই। (কল. ৩:১৩) যিহোবা নিজেও এমনটা করেন। বাইবেলে লেখা আছে, তিনি আমাদের “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন।—যিশা. ৫৫:৭.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা যিহোবার মতো অন্যদের ক্ষমা করতে পারি। আমরা এও জানতে পারব, এমন কোন কোন পাপ রয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে আমাদের প্রাচীনদের বলা উচিত এবং কেন যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের ক্ষমা করি। এ ছাড়া, আমরা এমন কিছু ভাই-বোনের বিষয়ে বিবেচনা করব, যারা অন্যদের কারণে অনেক কষ্ট ভোগ করেছিল। কিন্তু, পরে সেই ভাই-বোনেরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা শিখব, অন্যদের ক্ষমা করলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পেতে পারি।

যদি কেউ গুরুতর পাপ করে

৪. (ক) কেউ যদি গুরুতর পাপ করে, তা হলে তার কী করা উচিত? (খ) প্রাচীনেরা কী নির্ধারণ করবেন?

আমরা যখন জানতে পারি, কেউ কোনো গুরুতর পাপ করেছে, তখন প্রাচীনদের সেই বিষয়ে আমাদের জানানো উচিত। প্রথম করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদে এমনই কিছু পাপের বিষয়ে বলা হয়েছে। একজন ব্যক্তি যখন কোনো গুরুতর পাপ করেন, তখন তিনি যিহোবার আইনের প্রতি কোনো সম্মান দেখান না। তাই, যিহোবার কাছে তার প্রার্থনা করে ক্ষমা চাওয়া উচিত আর প্রাচীনদের সেই বিষয়ে জানানো উচিত। (গীত. ৩২:৫; যাকোব ৫:১৪) প্রাচীনেরা কি সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন? কেবল যিহোবারই কারো পাপ পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে। আর তিনি যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে তা করেন। * তবে, যিহোবা প্রাচীনদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন যেন তারা বাইবেলের নীতিগুলোর উপর ভিত্তি করে এটা নির্ধারণ করেন, যে-ব্যক্তি পাপ করেছেন, তিনি মণ্ডলীতে থাকতে পারবেন কি পারবেন না। (১ করি. ৫:১২) এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রাচীনেরা কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দেবেন। যেমন, সেই ব্যক্তি কি জেনে-শুনে পাপ করেছেন? তিনি কি বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করেছেন? তিনি কি দীর্ঘসময় ধরে এই পাপ করে চলেছেন? প্রাচীনেরা বিশেষভাবে এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দেবেন যে, তিনি কি প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছেন? আর যিহোবা যে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সেটার কি কোনো প্রমাণ আছে?—প্রেরিত ৩:১৯.

৫. যখন অন্যায়কারী ব্যক্তিকে সংশোধন করা হয়, তখন কোন কোন উপকার আসে?

যখন প্রাচীনেরা সেই অন্যায়কারী ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন, তখন তারা সেই একই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন, যেটা হয়তো স্বর্গে যিহোবা নিয়েছেন। (মথি ১৮:১৮) তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, সেই ব্যক্তি এখন থেকে আর মণ্ডলীতে থাকতে পারবেন না, তা হলে এই সিদ্ধান্তের ফলে মণ্ডলী সুরক্ষিত থাকবে। আর অন্যদের উপর সেই ব্যক্তির খারাপ প্রভাব পড়বে না। (১ করি. ৫:৬, ৭, ১১-১৩; তীত ৩:১০, ১১) এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই অন্যায়কারী ব্যক্তিও উপকৃত হবেন। আর তিনি অনুতপ্ত হওয়ার এবং যিহোবার কাছে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত হবেন। যখন তিনি তা করবেন, তখন যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (লূক ৫:৩২) প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করেন, যাতে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক আবারও জোড়া লেগে যায়।—যাকোব ৫:১৫.

৬. একজন ব্যক্তি যদি সমাজচ্যুত হন, তারপরও কি যিহোবা তাকে ক্ষমা করতে পারেন? ব্যাখ্যা করুন।

প্রাচীনেরা যদি দেখেন, একজন ব্যক্তি নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত নন, তা হলে তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়। যদি সেই ব্যক্তি দেশের কোনো আইন ভেঙে থাকেন, তা হলে প্রাচীনেরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন না। যিহোবা সরকারগুলোকে এই অধিকার দিয়েছেন যে, কেউ যদি দেশের আইন ভাঙে, তা হলে তারা যেন তাকে শাস্তি দেয়, তা সেই ব্যক্তি অনুতপ্ত হোক বা না-ই হোক। (রোমীয় ১৩:৪) তবে, সমাজচ্যুত হওয়ার পর সেই ব্যক্তি যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন আর অনুতপ্ত হন এবং জীবনে প্রয়োজনীয় রদবদল করেন, তা হলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। (লূক ১৫:১৭-২৪) যিহোবা তাকে সেইসময়ও ক্ষমা করতে পারেন, যখন সেই ব্যক্তি কোনো গুরুতর পাপ করেন।—২ বংশা. ৩৩:৯, ১২, ১৩; ১ তীম. ১:১৫.

৭. কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে, তা হলে আমরা কী করতে পারি?

একজন ব্যক্তির পাপ ক্ষমা করা হবে কি হবে না, সেই বিষয় নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়, কারণ এটা যিহোবার হাতে রয়েছে, আমাদের হাতে নেই। তাহলে, এর মানে কি এই, আমরা কিছুই করব না? হতে পারে, একজন ব্যক্তি আমাদের দুঃখ দিয়েছেন কিংবা আমাদের বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর পাপ করেছেন। সেই ব্যক্তি আমাদের কাছে ক্ষমা চান বা না-ই চান, আমরা আমাদের দিক তাকে ক্ষমা করতে পারি। আমরা রাগ পুষে রাখব, না কি সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেব, এটা আমাদের হাতে রয়েছে। তবে, নিজেদের রাগ ঠাণ্ডা করার জন্য এবং বিষয়টা ভুলে যাওয়ার জন্য সময় লাগতে পারে। এই বিষয়ে ১৯৯৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল: “আমরা যখন কাউকে ক্ষমা করি, তখন এর মানে এই নয় যে, আমরা তার পাপকে হালকাভাবে দেখছি বরং আমরা বিষয়টা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা আস্থা রাখি, যিহোবা হলেন সবচেয়ে উত্তম বিচারক আর সঠিক সময়ে তিনি সব কিছু ঠিক করে দেবেন।” কিন্তু, কেন যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের দিক থেকে অন্যদের ক্ষমা করে দিই এবং ন্যায়বিচার করার কাজটা তাঁর হাতে ছেড়ে দিই?

কেন অন্যদের ক্ষমা করব?

৮. কেন আমাদের অন্যদের ক্ষমা করা উচিত?

অন্যদের ক্ষমা করে আমরা দেখাই যে, যিহোবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। একবার যিশু একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। একজন দাস রাজার কাছ থেকে অনেক ঋণ নেয়। যখন সে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারে না, তখন রাজা তার সমস্ত ঋণ ক্ষমা করে দেন। কিন্তু, সেই দাস তার একজন সহদাসকে ক্ষমা করেনি, যে তার কাছ থেকে সামান্য ঋণ নিয়েছিল। (মথি ১৮:২৩-৩৫) এই দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিহোবা হলেন সেই রাজার মতো আর তিনি পুরোপুরিভাবে আমাদের ক্ষমা করেন। আমরা যদি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হই, তা হলে আমাদেরও অন্যদের ক্ষমা করা উচিত। (গীত. ১০৩:৯) অনেক বছর আগে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় একটা ভালো বিষয় লেখা ছিল: “আমরা অন্যদের যত বারই ক্ষমা করি না কেন, আমরা কখনোই যিহোবার মতো হতে পারব না। কারণ তিনি যিশুর মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে সবসময় আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।”

৯. যিহোবা কাদের ক্ষমা করেন? (মথি ৬:১৪, ১৫)

যারা ক্ষমা করবে, তাদের ক্ষমা করা হবে। আমরা যদি অন্যদের প্রতি করুণা দেখাই এবং ক্ষমা করি, তা হলে যিহোবা আমাদেরও ক্ষমা করবেন। (মথি ৫:৭; যাকোব ২:১৩) যিশুও তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়ে শিখিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ৬:১৪, ১৫.) আর আপনাদের কি ইয়োবের ঘটনা মনে আছে? যখন তার তিন বন্ধু ইলীফস, বিল্‌দদ ও সোফর তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তখন তারা ইয়োবকে খারাপ খারাপ কথা বলেছিলেন এবং তাকে দুঃখ দিয়েছিলেন। তবে, যিহোবা ইয়োবকে বলেছিলেন, তিনি যেন তাদের জন্য প্রার্থনা করেন। যখন ইয়োব তা করেছিলেন এবং তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন।—ইয়োব ৪২:৮-১০.

১০. রাগ পুষে রাখলে কী হতে পারে? (ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২)

১০ রাগ পুষে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি হয়। আমরা যদি কারো উপর রেগে থাকি, তা হলে এটা এমন হবে যেন আমরা একটা ভারি বোঝা বয়ে চলেছি। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.) এই কারণে যিহোবা আমাদের বলেন: “ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর।” (গীত. ৩৭:৮) এটা কতই-না উত্তম পরামর্শ! আমরা যদি ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে রাখি, তা হলে এটা এমন হবে যেন আমরা বিষ খেয়ে চলেছি। এতে আমাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা সবসময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকব আর আমাদের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যেতে পারে। (হিতো. ১৪:৩০) কিন্তু, আমরা যদি অন্যদের ক্ষমা করে দিই, তা হলে এতে আমাদেরই ভালো হবে। (হিতো. ১১:১৭) আমরা মনের শান্তি পাব আর সেইসঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এভাবে, আমরা আনন্দে থাকতে এবং ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পারব।

১১. কেন আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়? (রোমীয় ১২:১৯-২১)

১১ প্রতিশোধ নেওয়া যিহোবার কাজ। যিহোবা আমাদের কারো উপর প্রতিশোধ নেওয়ার কিংবা তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার দেননি। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১৯-২১.) আমরা সবাই অসিদ্ধ আর আমাদের কাছে সবসময় প্রতিটা বিষয়ের সম্পূর্ণ তথ্য থাকে না। তাই, আমরা যিহোবার মতো সঠিকভাবে ন্যায়বিচার করতে পারব না। (ইব্রীয় ৪:১৩) কিংবা কখনো কখনো আমরা অন্যদের উপর এতটাই রেগে যাই যে, আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এই কারণে যিহোবা যাকোবের মাধ্যমে লিখিয়েছিলেন: “যে রাগের কাছে নতিস্বীকার করে, সে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা করে না।” (যাকোব ১:২০) তাই, অন্যদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে আমাদের আস্থা রাখা উচিত যে, একেবারে সঠিক সময়ে যিহোবা আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।

রাগ পুষে রাখবেন না। বিষয়টা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিন, তিনি সমস্ত ক্ষতি পূরণ করে দেবেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবার উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে?

১২ ক্ষমা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই, যিহোবার উপর আমাদের এই আস্থা রয়েছে যে, তিনি আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন। আমরা যখন কোনো বিষয়কে যিহোবার হাতে ছেড়ে দিই, তখন আমরা তাঁর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি যে, তিনি সব কিছু ঠিক করে দেবেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, নতুন জগতে “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশা. ৬৫:১৭) এটা ঠিক যে, অন্যদের ক্ষমা করা সবসময় সহজ নয়, বিশেষ করে যখন কেউ আমাদের অনেক দুঃখ দিয়ে থাকে। কিন্তু তারপরও, আমরা ক্ষমা করতে পারি। কীভাবে? আসুন, এই বিষয়ে কিছু ভাই-বোনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখি, যারা অন্যদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

ক্ষমা করলে অনেক আশীর্বাদ পাওয়া যায়

১৩-১৪. ক্ষমা করার বিষয়ে আপনি টোনির কাছ থেকে কী শিখেছেন?

১৩ আমাদের অনেক ভাই-বোন এমন লোকদেরও ক্ষমা করে দিয়েছিল, যারা তাদের অনেক দুঃখ দিয়েছিল। এমনটা করার মাধ্যমে তারা কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছিল?

১৪ টোনি * ফিলিপিনসে থাকেন। যিহোবার সাক্ষি হওয়ার আগে তিনি অনেক রাগী স্বভাবের ছিলেন। আর এর ফলে, তিনি কথায় কথায় মারপিট করতেন। একদিন তিনি জানতে পারেন, হোসে নামে একজন ব্যক্তি তার বড়ো ভাইকে খুন করেছেন। টোনি রাগে ফেটে পড়েন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু, হোসেকে গ্রেপ্তার করে জেলে বন্দি করা হয়। কিছুসময় পর, হোসে যখন জেল থেকে ছেড়ে পান, তখন টোনি প্রতিজ্ঞা করেন, এবার তিনি তাকে মেরেই ফেলবেন। এই ভেবে টোনি একটা বন্দুক কেনেন। কিন্তু পরে, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। টোনি বলেন: “অধ্যয়ন করার ফলে আমি শিখেছি, আমাকে পরিবর্তিত হতে হবে আর সেইসঙ্গে নিজের রাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” কিছুসময় পর, তিনি বাপ্তিস্ম নেন এবং পরবর্তী সময়ে একজন প্রাচীন হন। পরে, একদিন তিনি জানতে পারেন, হোসেও একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছেন। যখন তাদের দু-জনের দেখা হয়, তখন তারা একে অন্যের গলা জড়িয়ে ধরেন। আর টোনি তাকে বলেন, তিনি হোসেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর ফলাফল কী হয়? টোনি বলেন, হোসেকে ক্ষমা করে তিনি যে কতটা খুশি হয়েছিলেন এবং কতটা স্বস্তি পেয়েছিলেন, তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না। সত্যিই, আমরা যখন কাউকে ক্ষমা করি, তখন আমরা যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ পাই!

পিটার ও সুয়ের কাছ থেকে আমরা শিখি যে, কেউ আমাদের খারাপভাবে আঘাত দিলেও আমরা তাদের ক্ষমা করে দিতে পারি! (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫-১৬. ক্ষমা করার বিষয়ে আপনি ভাই পিটার ও বোন সুয়ের কাছ থেকে কী শিখেছেন?

১৫ এখন ভাই পিটার এবং তার স্ত্রী সুয়ের অভিজ্ঞতার উপর মনোযোগ দিন। এটা ১৯৮৫ সালের ঘটনা। তারা কিংডম হলে ছিলেন আর সভা চলছিল। হঠাৎই সেখানে একটা বিস্ফোরণ হয়। পরে তারা জানতে পারেন, একজন ব্যক্তি কিংডম হলে একটা বোমা রেখে দিয়েছিল। বোমা বিস্ফোরণের ফলে বোন সু খুব খারাপভাবে আহত হয়েছিলেন। এই কারণে বোন সু এখনও পর্যন্ত না ভালো করে শুনতে পান, না ভালো করে দেখতে পান। এ ছাড়া, তার ঘ্রাণ শক্তিও চলে গিয়েছে। * তারা কখনো কখনো সেই দিনের কথা স্মরণ করতেন এবং মনে মনে বলতেন, ‘কীভাবে কোনো মানুষ এই ধরনের কাজ করতে পারে?’ অনেক বছর পর, সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় আর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যখন সেই দম্পতিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তারা সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন কি না, তখন তারা বলেছিলেন: “যিহোবা চান যেন আমরা রাগ পুষে না রাখি কারণ এতে আমাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকব এবং আমাদের আনন্দ চলে যাবে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের উপরও এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই, এই ঘটনার কিছুসময় পর, আমরা যিহোবার কাছে অনুরোধ করি যেন সেই ঘটনার বিষয়ে আমরা ক্রমাগত চিন্তা না করি।”

১৬ পিটার ও সুয়ের জন্য সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা কি সহজ ছিল? না। তারা বলেন: “কখনো কখনো সু যখন তার আঘাতের কারণে অনেক কষ্ট পায়, তখন আমাদের আবারও সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায় আর আমরা রেগে যেতে শুরু করি। তবে, আমরা সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি না, তাই আমাদের মন শান্ত হয়ে যায়। সত্যি বলতে কী, কাল যদি সেই ব্যক্তি আমাদের একজন ভাইও হন, তা হলে আমরা আনন্দের সঙ্গে তাকে স্বাগত জানাব। এই সমস্ত কিছু থেকে আমরা শিখেছি, বাইবেলের নীতিগুলো পালন করার ফলে আমরা বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে পারি আর আমাদের জীবনে আনন্দ বজায় রাখতে পারি। আমরা এইরকম চিন্তা করেও অনেক উৎসাহিত হই যে, খুব তাড়াতাড়ি যিহোবা আমাদের সমস্ত ক্ষতি পূরণ করে দেবেন।”

১৭. ক্ষমা করার বিষয়ে আপনি মারিয়ার কাছ থেকে কী শিখেছেন?

১৭ এখন মারিয়ার অভিজ্ঞতার উপরও মনোযোগ দিন। তিনি যখন সত্য সম্বন্ধে জেনেছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এবং তার ছোটো ছোটো দুই সন্তান ছিল। তবে, তার স্বামী সত্য গ্রহণ করেননি। কিছু বছর পর, তার স্বামী তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং তাদের ছেড়ে চলে যান। মারিয়া বলেন: “যখন আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে চলে যায়, তখন আমি একেবারে ভেঙে পড়ি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, এমনটা আমার প্রতি ঘটেছে। কখনো কখনো আমি খুব রেগে যেতাম আর নিজেকে দোষ দিতাম। আমি বলে বোঝাতে পারব না, আমি কতটা দুঃখের মধ্যে ছিলাম।” যদিও তাদের বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল, তবে সেই কষ্ট এখনও তিনি ভুলতে পারেননি। মারিয়া এও বলেন: “কয়েক মাস ধরে এই বিষয়গুলো আমাকে কষ্ট দিত। কিন্তু, পরে আমি বুঝতে পারি, এর কারণে যিহোবার সঙ্গে এবং অন্যদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।” এখন তার স্বামীর প্রতি মারিয়ার আর রাগ নেই বরং তিনি আশা করেন, একদিন তার স্বামীও হয়তো যিহোবার বিষয়ে শিখবে। তিনি নিশ্চিত, যিহোবা একদিন সব কিছু ঠিক করে দেবেন। মারিয়া একাই তার দুই সন্তানকে বড়ো করে তুলেছেন আর যিহোবার বিষয়ে তাদের শিখিয়েছেন। আজ তিনি খুবই আনন্দে রয়েছেন। তিনি তার দুই সন্তান এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করছেন।

যিহোবার মতো বিচারক আর কেউ হতে পারে না

১৮. আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?

১৮ এটা জেনে আমরা কতই-না স্বস্তি পাই যে, মানুষের বিচার করা আমাদের কাজ নয়। যিহোবা হলেন সর্বোচ্চ বিচারক আর তিনিই আমাদের সবার বিচার করবেন। (রোমীয় ১৪:১০-১২) যিহোবার মান সবসময় একই থাকে। তাই, আমরা আস্থা রাখতে পারি, তিনি ন্যায়বিচার করবেন। (আদি. ১৮:২৫; ১ রাজা. ৮:৩২) তিনি কখনো কারো প্রতি অবিচার করবেন না।

১৯. ভবিষ্যতে যিহোবা কী করবেন?

১৯ আমরা সবাই অসিদ্ধ আর কখনো কখনো এমন কাজ করে ফেলি, যেটার কারণে অন্যেরা আঘাত পায় কিংবা তাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু, আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন যিহোবা সব কিছু ঠিক করে দেবেন। সেই সময় আমাদের দেহ ও মনে থাকা প্রতিটা ক্ষত পূরণ হয়ে যাবে এবং আগের বিষয়গুলো আর মনে থাকবে না। (গীত. ৭২:১২-১৪; প্রকা. ২১:৩, ৪) তবে আসুন, সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমরা সবাই যিহোবার মতো একে অন্যকে ক্ষমা করে চলি।

গান ১৪৯ মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞ

^ যিহোবা সেই লোকদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন, যারা প্রকৃত অনুতপ্ত হয়। যিহোবার মতো আমাদেরও সেই লোকদের ক্ষমা করা উচিত, যারা আমাদের দুঃখ দিয়ে থাকে। কিছু পাপ আমরা নিজেরাই ক্ষমা করতে পারি। আবার কিছু পাপের বিষয়ে আমাদের প্রাচীনদের বলা উচিত। এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়ে আরও জানতে পারব। আমরা এও জানতে পারব, কেন যিহোবা চান যেন আমরা একে অন্যকে ক্ষমা করি এবং তা করলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ পাব।

^ ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।