সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৬

যিহোবার ভালোবাসা আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে

যিহোবার ভালোবাসা আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে

“সদাপ্রভু আমার সপক্ষ, আমি ভয় করিব না।”—গীত. ১১৮:৬.

গান ৩ “ঈশ্বর প্রেম”

সারাংশ *

১. কিছু ভাই-বোনের কোন বিষয়ে ভয় ছিল?

 কিছু ভাই-বোনের উপর মনোযোগ দিন, যাদের কোনো-না-কোনো বিষয়ে ভয় ছিল। নেস্টার এবং তার স্ত্রী মারিয়া এমন জায়গায় গিয়ে সেবা করতে চেয়েছিলেন, যেখানে বেশি প্রচারকের প্রয়োজন। * তবে, এরজন্য তাদের অনেক পরিবর্তন করতে হত এবং কম টাকাপয়সায় জীবনযাপন করতে হত। তাদের ভয় ছিল, এভাবে জীবনযাপন করলে তারা সুখে থাকতে পারবেন না। বিনিয়াম এমন একটা দেশে বাস করেন, যেখানে আমাদের কাজের বিরোধিতা করা হয়। তিনি যখন একজন সাক্ষি হয়েছিলেন, তখন তার ভয় ছিল, হয়তো একদিন তার উপরও তাড়না আসবে। কিন্তু, এর চেয়েও বেশি তার এই বিষয়ে ভয় ছিল যে, যখন তার পরিবারের সদস্যেরা জানতে পারবে, তিনি একজন সাক্ষি হয়েছেন, তখন তারা কী বলবে। ব্যালেরির এমন এক ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, যেটা তার শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। তিনি এমন একজন ডাক্তারকে খোঁজার খুব চেষ্টা করছিলেন, যিনি রক্ত ছাড়াই তার চিকিৎসা করতে পারবেন। তার ভয় ছিল, তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না।

২. কেন আমাদের ভয় কাটিয়ে ওঠা উচিত?

আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে আর ভয় পায়। কিন্তু, আমরা যদি ভয় কাটিয়ে না উঠি, তা হলে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এর ফলে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে। আর শয়তান তো এটাই চাই। শুধু তা-ই নয়, সে এও চায় যেন আমরা ভয়ের কারণে প্রচার করা বন্ধ করে দিই এবং যিহোবার অন্যান্য আজ্ঞাও পালন না করি। (প্রকা. ১২:১৭) শয়তান খুব দুষ্ট ব্যক্তি আর তার অনেক শক্তি রয়েছে। তারপরও, আমরা শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। কীভাবে?

৩. কীভাবে আমরা ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি?

যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন আর তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমরা যদি এই বিষয়ে দৃঢ় নিশ্চিত হই, তা হলে আমরা শয়তানের ফাঁদে পড়ব না আর ভয় পাব না। (গীত. ১১৮:৬) ১১৮ গীতের রচয়িতার বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। তিনি অনেক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। তার অনেক শত্রু ছিল, যাদের মধ্যে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিও ছিল। (৯, ১০ পদ) তিনি অনেক চাপের মধ্যে ছিলেন। (১৩ পদ) আর একবার তো যিহোবা তাকে কড়াভাবে শাসন করেছিলেন। (১৮ পদ) তবে তিনি জানতেন, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন আর তিনি কখনো তাকে একা ছেড়ে দেবেন না। এই কারণে সেই রচয়িতা বলেছিলেন, “আমি ভয় করিব না।” তিনি দৃঢ় নিশ্চিত ছিলেন, জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবা সবসময় তাকে সাহায্য করবেন।—গীত. ১১৮:২৯.

৪. আমরা যখন নিশ্চিত হব যে, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন, তখন আমরা কোন বিষয়গুলো চিন্তা করে ভয় পাব না?

যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন। আমরা যখন এই বিষয়ে দৃঢ় নিশ্চিত হব, তখন আমরা ভয় কাটিয়ে উঠতে পারব। আমরা আমাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ কীভাবে জোগাব, তা চিন্তা করে ভয় পাব না, আমরা অন্য লোকদের ভয় পাব না এবং আমরা মৃত্যুকেও ভয় করব না। যে-তিন জন ভাই-বোনের বিষয়ে আমরা শুরুতে আলোচনা করেছিলাম, তারাও এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন। এই কারণে তারা তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে না পারার ভয়

একজন ভাই তার পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য মাছ ধরছেন। আর তার ছেলে তাকে সাহায্য করছে (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. একজন মস্তক হয়তো কোন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবা চান যেন একজন মস্তক তার পরিবারের ভালোভাবে যত্ন নেয়। (১ তীম. ৫:৮) এই অতিমারির সময়ে আপনি হয়তো এইরকম চিন্তা করেছিলেন, ‘এই কঠিন সময় আমার চাকরি চলে যাবে না তো? যদি চলে যায়, তা হলে আমি কি আরেকটা চাকরি খুঁজে পাব? কীভাবে আমি পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাব? ঘরের ঋণ কীভাবে শোধ করব? কিংবা ঘরের ভাড়া কীভাবে দেব?’ অথবা নেস্টার ও মারিয়ার মতো আপনিও হয়তো আরও বেশি সেবা করতে চান, তবে আপনি ভয় পাচ্ছেন যে, কম টাকাপয়সায় জীবনযাপন করতে পারবেন কি না। দুঃখের বিষয় হল, শয়তান এই ভয়কে কাজে লাগিয়েছে, যেটার কারণে অনেক ভাই-বোন উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করতে পারছে না।

৬. শয়তান আমাদের কী বিশ্বাস করাতে চায়?

শয়তান আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চায় যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন না। আর তিনি পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর ক্ষেত্রে কখনো আমাদের সাহায্য করবেন না, আমাদের নিজেদেরই সমস্ত কিছু করতে হবে। তাই, আমাদের মনে হতে পারে, আমাদের চাকরিই সব কিছু আর কোনোভাবেই এটাকে হাতছাড়া করলে চলবে না। এরজন্য যদি আমাদের বাইবেলের নীতিগুলো উপেক্ষা করতে হয়, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই।

৭. যিশু আমাদের কোন বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন?

যিশু যিহোবাকে খুব ভালোভাবে জানেন আর তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, যিহোবা আমাদের ‘চাওয়ার আগেই জানেন, আমাদের কী কী প্রয়োজন।’ (মথি ৬:৮) যিশুর সম্পূর্ণ আস্থা ছিল, যিহোবা তাঁর উপাসকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। আমরা সবাই যিহোবার পরিবারের অংশ এবং তিনি হলেন আমাদের মস্তক। আর যদি যিহোবা চান যে, প্রত্যেক পরিবারের মস্তক ১ তীমথিয় ৫:৮ পদে দেওয়া নীতি মেনে চলুক, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি নিজেও এই নীতি মেনে চলবেন।

যিহোবা খেয়াল রাখবেন যেন আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ হয়। তিনি হয়তো ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করবেন (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. (ক) আমাদের যদি পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর ব্যাপারে চিন্তা হয়, তা হলে আমাদের কী মনে রাখা উচিত? (মথি ৬:৩১-৩৩) (খ) এই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছবিতে দেখানো স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

আমরা যখন নিশ্চিত হব যে, যিহোবা আমাদের এবং আমাদের পরিবারকে ভালোবাসেন, তখন আমরা পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর ব্যাপারে চিন্তা করে ভয় পাব না। (পড়ুন, মথি ৬:৩১-৩৩.) যখন যিহোবা পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি আমাদের জন্য শুধুমাত্র কয়েকটা জিনিস নয় বরং অনেক কিছু সৃষ্টি করেছিলেন, যাতে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। (আদি. ২:৯) এখান থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা শুধু আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোই জোগাতে চান না, কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের খুব ভালোও বাসেন। হতে পারে, আমাদের কাছে অনেক কিছু নেই, কিন্তু আমরা এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারি, অন্ততপক্ষে আমাদের জীবনটা তো কেটে যাচ্ছে আর যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে যাচ্ছেন। (মথি ৬:১১) বর্তমানে, আমাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হচ্ছে অথবা কম টাকাপয়সায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তবে, এর বিনিময়ে যিহোবা আমাদের অনেক আশীর্বাদ করবেন, বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে। নেস্টার ও মারিয়াও এই বিষয়টা উপলব্ধি করেছিলেন।—যিশা. ৬৫:২১, ২২.

৯. নেস্টার ও মারিয়ার কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

নেস্টার ও মারিয়া কলম্বিয়াতে থাকেন। তাদের একটা সুন্দর ঘর এবং একটা ভালো চাকরি ছিল। তারা বলেন: “আমরা চিন্তা করছিলাম, আমাদের কিছু জিনিস বিক্রি করে দেব আর এমন এক জায়গায় গিয়ে সেবা করব, যেখানে বেশি প্রচারকের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, আমরা হয়তো কম টাকাপয়সায় জীবনযাপন করতে পারব না আর আনন্দে থাকতে পারব না।” কিন্তু পরে, তারা এই বিষয়ে চিন্তা করেন যে, যিহোবা এখনও পর্যন্ত তাদের জন্য কী কী করেছেন আর তিনি তাদের কতটা ভালোবাসেন। এভাবে, তারা তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তারা নিশ্চিত হয়েছিলেন, যিহোবা তাদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করবেন। তাই, তারা নিজেদের চাকরি ছেড়ে দেন, বাড়ি বিক্রি করে দেন। আর কলম্বিয়াতে এমন একটা জায়গায় গিয়ে সেবা করতে শুরু করেন, যেখানে বেশি প্রচারকের প্রয়োজন ছিল। তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নেস্টার বলেন: “আমরা বুঝেছি, মথি ৬:৩৩ পদে বলা কথাগুলো কতটা সত্য। আমাদের কখনো কোনো বিষয়ের অভাব হয়নি। এখন আমরা দু-জনে আগের চেয়ে অনেক সুখে আছি।”

অন্য লোকদের ভয়

১০. কেন মানুষ মানুষকে ভয় পায়?

১০ আদম ও হবা যখন থেকে বিদ্রোহ করেছিলেন, তখন থেকে মানুষ একে অন্যের উপর তাড়না নিয়ে আসছে। (উপ. ৮:৯) আধিকারিকেরা অন্যদের সঙ্গে খারাপভাবে আচরণ করে। অপরাধীরা দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজ করে। স্কুলে কিছু ছেলে-মেয়ে অন্যদের বিরক্ত করে, রাগিয়ে তোলে আর এমনকী ভয়ও দেখায়। আবার কিছু লোক তাদের পরিবারের সদস্যদেরই মারধর করে। এই কারণেই এখন মানুষ মানুষকে ভয় পায়। আসুন দেখি, শয়তান এই ভয়কে কীভাবে কাজে লাগাচ্ছে।

১১-১২. শয়তান আর কোন কোন উপায়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে?

১১ শয়তান চায় যেন আমরা মানুষকে এতটাই ভয় পাই যে, প্রচার করা বন্ধ করে দিই আর সেইসঙ্গে যিহোবার অন্যান্য আজ্ঞাও পালন না করি। শয়তান সরকারগুলোর মাধ্যমে আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। (লূক ২১:১২; প্রকা. ২:১০) সে লোকদের মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়ে সন্দেহ জাগিয়ে তোলার মতো তথ্য ছড়িয়ে থাকে আর সেগুলোর মধ্যে কিছু তথ্য তো একেবারেই মিথ্যা। এই কথাগুলো শুনে অন্যেরা আমাদের উপহাস করতে পারে কিংবা মারধর করতে পারে। (মথি ১০:৩৬) আর এগুলো কোনো নতুন বিষয় নয়। যিশুর শিষ্যদের প্রতিও এমনটা ঘটেছিল।—প্রেরিত ৫:২৭, ২৮, ৪০.

আমাদের পরিবারের সদস্যেরা আমাদের বিরোধিতা করলেও আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন (১২-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১২ শয়তান আরেকটা উপায়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। কিছু লোক এটা চিন্তা করে ভয় পায় যে, তাদের মারধর করা হবে। তবে, তারা এটা চিন্তা করে আরও বেশি ভয় পায়, তাদের পরিবারের লোকেরা কী বলবে। এই ভয়ই তাদের উদ্‌বিগ্ন করে তোলে। তারা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে অনেক ভালোবাসে আর চায় যেন তারাও যিহোবার বিষয়ে শেখে। কিন্তু, সেইসময় তারা খুব দুঃখ পায়, যখন সেই আত্মীয়েরা যিহোবা এবং তাঁর লোকদের সম্বন্ধে খারাপ খারাপ কথা বলে। তবে অনেকসময়, যে-আত্মীয়স্বজন শুরুতে তাদের বিরোধিতা করত, তারা পরবর্তী সময়ে যিহোবার সাক্ষি হয়েছে। কিন্তু, আমাদের পরিবারের লোকেরা যদি আমাদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক না রাখে, তা হলে কোন বিষয়টা আমাদের মনে রাখা উচিত?

১৩. আমাদের পরিবারের লোকেরা যদি আমাদের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক না রাখে, তা হলে কোন কথাগুলো থেকে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি? (গীতসংহিতা ২৭:১০)

১৩ গীতসংহিতা ২৭:১০ পদে লেখা কথাগুলো থেকে আমরা অনেক সান্ত্বনা পাই। (পড়ুন।) কেউ আমাদের সঙ্গে থাকুক বা না-ই থাকুক, যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবেন। যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন আর আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে তিনি অনেক আশীর্বাদ করবেন এবং পরিবারের সদস্যদের চেয়েও খুব ভালোভাবে আমাদের যত্ন নেবেন। তিনি আমাদের প্রতিটা প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেবেন আর মনের শান্তি প্রদান করবেন। আমরা আনন্দ বজায় রাখতে পারব এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের এক উত্তম সম্পর্ক থাকবে। বিনিয়ামও এমনটা অনুভব করেছিলেন।

১৪. বিনিয়ামের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

১৪ বিনিয়াম ভালোভাবেই জানতেন যে, তার দেশে সাক্ষিদের উপর তাড়না নিয়ে আসা হয়। তারপরও, তিনি একজন সাক্ষি হয়েছিলেন। তিনি মনে রেখেছিলেন, যিহোবা তাকে খুব ভালোবাসেন আর এভাবে তিনি ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি কখনো চিন্তা করিনি, আমার উপর এত তাড়না আসবে। তবে, সরকারের কাছ থেকে বিরোধিতা সহ্য করার চেয়ে আমার এই বিষয়ে আরও বেশি ভয় ছিল যে, আমার পরিবারের লোকেরা আমার বিরোধিতা করবে। আমার বাবা সাক্ষি নন আর আমার ভয় ছিল, তিনি এবং অন্যেরা যখন জানতে পারবে, আমি একজন সাক্ষি হয়েছি, তখন তারা চিন্তা করবে যে, আমি আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়েছি।” কিন্তু, বিনিয়াম দৃঢ় নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা যাদের ভালোবাসেন, তাদের তিনি যত্ন নেন। তিনি বলেন: “আমি সেই ভাই-বোনদের বিষয়ে চিন্তা করেছিলাম, যারা আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে, যারা ভেদাভেদের শিকার হয়েছে আর যাদের উপর জনতা আক্রমণ করেছে। যিহোবা তাদের একা ছেড়ে দেননি বরং সাহায্য করেছিলেন। আমি জানতাম, আমি যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে তিনি আমাকেও আশীর্বাদ করবেন। আমাকে অনেক বার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আর অনেক মারধর করা হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা সবসময় আমাকে সাহায্য করেছিলেন। তিনি প্রতিটা মুহূর্তে আমার পাশে ছিলেন।” এভাবে যিহোবা বিনিয়ামের বাবা হয়ে উঠেছিলেন আর যিহোবার লোকেরা তার পরিবার।

মৃত্যুর ভয়

১৫. কেন আমরা সবাই মৃত্যুকে ভয় পাই?

১৫ আমরা সবাই মৃত্যুকে ভয় পাই। তাই, যখন আমরা অসুস্থ হই অথবা আমাদের পরিবারের সদস্যেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন আমরা চিন্তা করতে শুরু করি। বাইবেলে মৃত্যুকে আমাদের শত্রু বলা হয়েছে। (১ করি. ১৫:২৫, ২৬) কিন্তু, কেন আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই? এর কারণ হল, যিহোবা আমাদের মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকার ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (উপ. ৩:১১) আমরা কেউই মরতে চাই না। এই কারণে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিই, ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করি আর ব্যায়াম করি। আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন ডাক্তারের কাছে যাই, ওষুধ খাই এবং অযথা আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলি না।

১৬. কীভাবে শয়তান আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে?

১৬ শয়তান জানে, আমরা সবাই আমাদের জীবনকে খুব ভালোবাসি। সে দাবি করে, আমরা আমাদের জীবনকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারি, এমনকী যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বও ভেঙে ফেলতে পারি। (ইয়োব ২:৪, ৫) এটা একেবারেই মিথ্যা কথা! তবে, শয়তানের কাছে “মৃত্যু ঘটানোর শক্তি রয়েছে।” (ইব্রীয় ২:১৪, ১৫) তাই, সে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, যাতে আমরা যিহোবাকে পরিত্যাগ করি। কখনো কখনো সে লোকদের কিংবা সরকারগুলোর মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেয় যে, আমরা যদি যিহোবার সেবা করা বন্ধ না করি, তা হলে আমাদের মেরে ফেলা হবে। অথবা আমরা যদি কখনো খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন শয়তান ডাক্তার অথবা আমাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আমাদের উপর চাপ দিতে পারে, যাতে আমরা জীবন রক্ষা করার জন্য রক্ত গ্রহণ করি কিংবা এমন কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করি, যেটা বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে।

১৭. রোমীয় ৮:৩৭-৩৯ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের মৃত্যুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়?

১৭ আমরা কেউই মারা যেতে চাই না। কিন্তু আমরা জানি, আমরা যদি মারাও যাই, যিহোবা আমাদের ক্রমাগত ভালোবাসবেন। (পড়ুন, রোমীয় ৮:৩৭-৩৯.) যিহোবার বন্ধুরা মারা গেলেও তিনি তাদের ভুলে যান না। তিনি তাঁর স্মৃতিতে তাদের সুরক্ষিত রাখেন। তিনি তাদের আবারও জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। (লূক ২০:৩৭, ৩৮; ইয়োব ১৪:১৫) যিহোবা আমাদের “অনন্তজীবন” দেওয়ার জন্য তাঁর একজাত পুত্রকে বলি হিসেবে দান করেছিলেন। (যোহন ৩:১৬) এতে কোনো সন্দেহ নেই, যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। তাই, আমরা যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা লোকেরা যদি আমাদের ভয় দেখায় এবং হুমকিও দেয়, তা হলেও আমরা যিহোবার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব না। এর পরিবর্তে, আমরা তাঁকে বলব যেন তিনি আমাদের বুদ্ধি, সাহস ও সান্ত্বনা দেন। ব্যালেরি এবং তার স্বামী এমনটাই করেছিলেন।—গীত. ৪১:৩.

১৮. ব্যালেরির কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

১৮ ব্যালেরির বয়স যখন ৩৫ বছর, তখন তার এমন এক ধরনের ক্যান্সার হয়েছিল, যেটা খুব কম লোকের হয়। আর এটা তার শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। তিনি বলেন: “এই খবর শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। ডাক্তারেরা বলেছিল, আমাকে একটা বড়ো অপারেশন করাতে হবে, নাহলে আমি বাঁচব না। আমি যত জন ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম, তারা প্রত্যেকে একই কথা বলেছিল, আমাকে রক্ত গ্রহণ করতেই হবে। এটা শুনে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু, আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে, যা-ই ঘটুক না কেন, আমি রক্ত গ্রহণ করব না কারণ আমি যিহোবার আইন অমান্য করতে চাই না। আমি জানতাম, যিহোবা আমাকে কতটা ভালোবাসেন আর এখন আমার পালা এটা দেখানোর যে, আমি তাঁকে কতটা ভালোবাসি। যখন ডাক্তারেরা বলত, আমার শরীর দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে যেত যে, আমি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব আর শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করব। অবশেষে, ডাক্তারেরা আমার প্রস্তাব মেনে নেয় আর রক্ত ছাড়াই আমার অপারেশন হয়। এখনও আমার কোনো-না-কোনো সমস্যা লেগেই থাকে, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে আমি সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। আমার মনে আছে, যখন আমি জানতে পেরেছিলাম যে, আমার ক্যান্সার হয়েছে, তার কিছুদিন আগে আমরা সভায় একটা প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেটার শিরোনাম ছিল, ‘সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করা।’ * আমরা সেই প্রবন্ধটা বার বার পড়েছিলাম আর সেখান থেকে অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলাম। আমরা এই ধরনের আরও অনেক প্রবন্ধ পড়েছিলাম। আমরা কখনো প্রচারে কিংবা সভাগুলোতে যাওয়া বন্ধ করে দিইনি। এমনটা করার মাধ্যমে আমরা মনের শান্তি লাভ করেছিলাম আর এই কঠিন পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম।” ব্যালেরি সবসময় মনে রেখেছিলেন, যিহোবা তাকে কতটা ভালোবাসেন। এর ফলে, তিনি ভয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

আপনি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন

১৯. খুব শীঘ্রই কী ঘটবে?

১৯ পুরো পৃথিবীতে আমাদের ভাই-বোনেরা যিহোবার সাহায্যে শয়তানের বিরোধিতা করছে আর সাহসের সঙ্গে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করছে। (১ পিতর ৫:৮, ৯) আপনিও এমনটা করতে পারেন! খুব শীঘ্রই, যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুকে আর তাঁর সহশাসকদের “দিয়াবলের কাজগুলো বিনষ্ট” করতে বলবেন। (১ যোহন ৩:৮) তারপর, ঈশ্বরের লোকেরা “ভীত হইবে না; এবং ত্রাস হইতে দূরে থাকিবে।” (যিশা. ৫৪:১৪; মীখা ৪:৪) তবে, সেই সময় না আসা পর্যন্ত, আমাদের ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য পরিশ্রম করে চলতে হবে।

২০. নিজেদের ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কী করতে পারি?

২০ নিজেদের ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের এই বিষয়ে নিশ্চয়তা বাড়াতে হবে যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের ভালোবাসেন আর যখনই তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখনই তিনি তাদের সাহায্য করেন। তা বাড়ানোর জন্য আমরা চিন্তা করতে পারি যে, অতীতে তিনি তাঁর লোকদের কীভাবে সুরক্ষা জুগিয়েছিলেন আর এই বিষয়টা আমরা অন্যদেরও জানাতে পারি। আমরা এও চিন্তা করতে পারি, যিহোবা এখনও পর্যন্ত আমাদের কীভাবে সাহায্য করেছেন। মনে রাখবেন, আপনি একা নন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন। আর যদি যিহোবা আপনার সঙ্গে থাকেন, তা হলে আপনি নিশ্চয়ই আপনার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন!—গীত. ৩৪:৪.

গান ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত

^ অনেকসময়, ভয়ের কারণে আমরা কিছু বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। তবে, কখনো কখনো শয়তান এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, আমরা যদি নিশ্চিত থাকি যে, যিহোবা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন আর আমাদের ভালোবাসেন, তা হলে আমরা ভয় কাটিয়ে উঠতে পারব।

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: এক স্বামী-স্ত্রী মণ্ডলীর একজন বোন এবং তার পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে আসছেন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাইয়ের বাবা-মা চান না যেন ভাই যিহোবার উপাসনা করুক। কিন্তু, এই ভাই নিশ্চিত যে, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন।